চিরপথিক বাউল
(৪)
সুধা-রসে মাতোয়ারা বাউল
চরের দাবদাহ পেরিয়ে
আধ-কোমড় কাচ-জলে;
শীতলতায় ক্ষরিত
নিঃসারিত যত
শ্রান্তি, ক্লান্তি, আবিলতা।
দুলুং-এর সুধাস্রোতে
স্নিগ্ধ কায়ামন।
দূরে পল্লিবালা
সোনাখোচারা খুঁজে ফেরে
আদিম যুগ হতে,
আঁচলে জল ছাঁকা
বালির তলানিতে
সোনার কণা-
দুলুং-এর মত
কোয়েল-কারো,
সুবর্ণরেখায়।
অবোঝ সোনাখোচা!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
সঞ্জীবিত নিশ্চিন্ত বাউল।
 
বাউলের চোখে বিবিদিষা
সোনা-অন্বেষণে বৃথা
কালযাপন কেন
সরল আদিবাসী বালাদের?
সরল জীবনের সুর
ভাঙ্গার অবোধ মৃগতৃষা
আঁধার-সাঁঝে মাদলের তালে
মহুয়ার ঘোরে ছন্দিল নাচে
মেলে না কি
সোনার থেকেও ঢের বেশি!
বাউলের তাই দীর্ঘশ্বাস-
সুধা জড়ানো পদক্ষেপে
ধীরে ধীরে হাটের পথে ফেরে
প্রশান্ত, নিশ্চিন্ত বাউল।
 
নাবিক ছেলেটির
উষ্ণ আপ্যায়ন,
চিংড়ি পোস্ত-ভাত
যেন মন্দিরের ভোগের প্রসাদ
হাটুরেদের পাশে বসে
সে এক আনন্দ-ভোজ!
ভোজনান্তে কিছুক্ষণ
নিমীলিত নয়নে
বাউলের মন মুকুরে
ভেসে ওঠে ভাবনার
স্রোতের পর স্রোতঃ
রোহিণীর হাটে, দুলুং এর বক্ষে,
অসংখ্য হাটুরের সাগরে
ঘটমান আনন্দোৎসবের আয়োজন,
পুতুল-নাচের রশি টেনে
বাউল-নাচনের আনন্দে
নেপথ্যচারী জীবন-বিধাতা।
দিনের শেষের বাস হারিয়ে
নতুন দিনের
প্রাপ্তির খাতা এখনও খোলা।
বাউলের একান্ত প্রার্থনাঃ
এমনি করে
দিনের শেষ বাস
হারানোর কাহিনী
যেন ফিরে ফিরে আসে।
(সমাপ্ত)
 
#পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি।