চিরপথিক বাউল
(৩)
বাস থামে।
বাউলের চোখে রোহিণী-
নয় সে চন্দ্রপ্রিয়া দক্ষসুতা।
নিষ্ঠুর বাস্তবের
দুলুং নদির প্রিয়া,
বাউলের দেখা
পল্লীরাণী রোহিণী।
হাটবারের ভিড়
উঠছে জমে।
বাসের হর্ন,
ভ্যান-রিক্সাওয়ালার
পিঠ থেকে নেমে আসা
অজস্র পসরা
সাজিয়ে সেজে উঠছে
রাণী রোহিণী-
হৃদয়-মহাকাব্যের
পরবর্তি পাতা।
মানুষের ভিড়ে
হারিয়ে মন-ফকিরা
চির-অচেনা নিশ্চিন্ত বাউল।
 
ছোট্ট হোটেল
হাটের এক কোণে
হাফ-প্যান্ট, আদুর গা,
হাতছানি দিয়ে ডাকে
পরিচারক বালক,
“আসেন বাবু!
চিংড়ি পোস্ত-ভাত,
হাটের জন্য!”
জাদু জানে বালক,
হাট-দরিয়ার নাবিক,
অমোঘ টানে
বেঞ্চে গিয়ে বসি।
“আগে চা দে!”
খেয়ে উঠে পড়ি
যেতে হবে দুলুং-বক্ষে
শশব্যস্ত, অথচ নিশ্চিন্ত বাউল।
 
দুলুং-এর বালি
হাটের পথেই লুন্ঠিত
রূপোলি বালির তির্যক রেখা,
সমাসন্ন বালির চর।
আবার হাতছানি
আবার ডাক
বাঁ-দিকে শাল গাছের ছায়ায়,
মহুয়ার কলসি পেতেঃ
“চলবে নাকি! খাসা!”
চাণ্ডিলে সুবর্ণরেখায়,
মনোহরপুরের কোয়েলে- কারোতে,
গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখায়,
অযোধ্যার পাহাড়ে,
মেতেছি মহুয়ায়।
আদিবাসি-মুলুকের ধ্রুব-সুধা।
হাতব্যাগ পেতে বসে পড়ি,
শালপাতার বাটি, সুধাভরা,
হৃদয়-মহাকাব্যের মলাট
দিয়ে খুলে, অশান্ত পাতাগুলো,
না ছেঁড়া পর্যন্ত
চলে সুধাপান।
“বাবু, ব্যাগ ধরি,
চানে যান।”
সতর্ক পসারির নির্দেশে
রূপোলি দুলুং-এর বুকে।
টলমল! তবু নিশ্চিন্ত বাউল।
[এর পর চতুর্থ এবং শেষ পর্ব]
 
#পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি।