চিরপথিক বাউল
(২)
আমার মন বাউল, হৃদয় বাউল,
চোখ বাউল, আশা বাউল,
আত্মা বাউল, চরণ বাউল,
মহুয়ার মাদকতার মতো
আমার সব কিছু জুড়ে বাউল।
আমার নিজের কিছু নেই,
শুধু ক্লান্তিহীন অনন্ত পথচলা।
বিলীন হলো
এক গ্রাম্য প্রাণলীলা,
এলো ফিরে
আর এক মশাল-মাদল-নাচ
মেশানো ছায়াচিত্র,
পথের প্রেক্ষাগৃহে,
একক দর্শক আমি,
আর আমার ধ্রুবতারা-
সাঁওতাল যুগল।
নিষুপ্তির ঘোরে
চির-নিশ্চিন্ত বাউল।
 
বাজলো নটা।
অনেক পথ হেঁটেছি
ছেড়ে গেছে এক গাঁয়ের পথে
আমার ধ্রুবতারা।
একা্কী আগন্তুক
কেশিয়াড়ির অচিন বন্দরে।
শ্রান্ত, ক্ষুধাতুর-
হাতব্যাগ পাশে রেখে
গা এলিয়ে দেয়।
দোকানির দুচোখ
লেসার-রশ্মি দিয়ে ঠাহর করে
বাউলের মনের কথা।
ঝাঁপ ফেলার আগের
শেষ খদ্দেরের প্রাপ্তি-
ওমলেট-ডাল-ভাত।
হৃদয়-মহাকাব্যের ইঞ্জিনের রসদ
আগামীর জ্বালানি।
আপাতত তৃপ্ত বাউল।
 
বেলঘরিয়া।
অনেক কাল আগে
ফেলে আসে দোকানি বাউল
পসরা পাতে কেশিয়াড়ির
পথের ধারে।
সমৃদ্ধিলাভের ফসল,
দোতলা মাটির বাড়ি।
দোতলার খোলা নিকনো বারান্দায়
দড়ির খাটিয়া- পাশে কম্বল
পথিক বাউলের রাতের ঠিকানা।
প্রশ্ন মনে- আগামীকালের ঠিকানা?
লন্ঠনের আলোয়
বিনয় ঘোষের বইয়ের পাতায়
মেলে ঠিকানা- রোহিণী।
স্বপ্নমাখা চোখ জড়িয়ে আসে,
ঘুমে অচেতন-
সেই নিশ্চিন্ত বাউল।
 
(পরদিন)
রোহিণী।
আজ বাউলের ঠিকানা।
শাল-অরণ্যের বুক চিড়ে
এগিয়ে চলে বাস-
দু’ঘন্টার পথ।
বৃষ্টিভেজা শালপাতা-ঘ্রাণ
মাদকতা্র মিশেল
মিঠে রোদ্দুরমাখা
মাতলা হাওয়া।
হৃদয়ে বসত করা
মহাকাব্য-চুম্বকের টানে
অজান্তে নিবদ্ধ
আর একটি পাতা।
তৃপ্তির আশায় বুঁদ
চিরনতুন নিশ্চিন্ত বাউল।
[এর পর তৃতীয় পর্বে]
 
#পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি।