বন্ধুগণ, আমি আমার কবিতা সম্পর্কে একটু আলোচনা করতে যাচ্ছি। আশা করছি ভাল লাগবে। প্রথমেই একটা দুঃখের বিষয় জানিয়ে রাখি, আমি একবার কবিতা লিখে শেষ করে ফেললে; কি লিখলাম, কেন লিখলাম, একদম ভুলে যাই। তাই, আমার আলাপ/কথাবার্তা যারা সিরিয়াস পাঠক তাদের জন্য নয়।


আরেকটা কথা, প্রায়ই আমার মাথার ভেতর একটা যন্ত্রণা কাজ করে। এই যন্ত্রণা হচ্ছে কিছু একটা করতে না পারার যন্ত্রণা, সত্য কথা সরাসরি বলি, ব্যর্থতার যন্ত্রণা।


আপনারা সবাই মানবেন যে, “কবিতায় সীমানার অতিক্রম এই সমাজে অধিকতর অনুমোদিত”। তাই কবিতাই ব্যর্থদের একমাত্র সাধনা।


কবিতা’র বিষয়ে আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। আমার ব্যর্থতা ভাল লাগে, কেননা ব্যর্থতা কথাটাই বার বার আমাকে কবিতার সাধনার কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশ্বাস করুণ, কেউ কেউ শুধু মনের আনন্দের জন্যই কবিতা লিখতে পারে, যেখানে খ্যাতির মোহ থাকেনা।


যাই হোক; যখন কবিতা লিখি; তখন আমার বেশ মনে থাকে যে কবিতা লিখছি। তারপর, যখন একটা কবিতা লেখা হয়ে যায়, তখন খুবই ভাল লাগে। কিন্তু আমার কি দুর্ভাগ্য দেখুন, বন্ধুরা যখন আমার পুরানো কোন কবিতা আমার সামনেই আবৃতি করে; আমি মনেই করতে পারিনা। এমনকি আমার সংগ্রহে আমার লেখা সব কবিতা থাকার কথা কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার সংগ্রহে সবগুলো কবিতা নেই।


বন্ধুগণ, যারা আমার সহপাঠী (স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়) তাদের জানার কথা কবিতা বিষয়টা আমি পড়ার জন্য যতটা সিরিয়াসলি নিয়েছি লেখার জন্য ততটা সিরিয়াসলি নেই নাই। টাকা খরচ করে কবিতার বই কেনাকে অনেকে অপচয় বলতে পারেন; কিন্তু ভালবাসার ব্যাপারটা বিবেচনা করা উচিৎ।


আমার মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশুনা করা মানুষ, যে কিনা আট বছর যাবত ব্যাংকে অর্থ-ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত আছে; তার জন্য কবিতা চর্চা - একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, তাই না!


আমি জানি, আমার সহপাঠী/সহকর্মী যারা আমার ব্যপারটা ভাবেন; তারা এইটাকে অর্থহীন বলবেন।


একটি জিনিস আমার ভাবতে ভাল লাগে; যে আমি এই সমাজ-সংস্কৃতির কোন ক্ষেত্রেই একটি বিশেষ স্থান দখল করতে চাইনা। সমাজ-সংস্কৃতির মাঝে “আমি” এবং “আমার” বলতে আমি কোন ব্যপার খুঁজি না।


যাক সে কথা; অনেকে বলেন, এই শহরে কাক এবং কবির সংখ্যা সমানুপাতিক। কোন একটি কাক আজ গরমে পানি পেলো কিনা কিংবা কোন কবি লেখার কাগজ/কলম পেলো কিনা; এ নিয়ে কেউ না ভাবলেও চলে। কেউ কেউ ভাবেন, এদেশের মাটি খুবই উর্বর আর তাই যৌবনে কিছু লোক কবি হয়ে উঠে।


বন্ধুরা বলে, প্রেমে ব্যর্থ মানুষরা নাকি এক প্রকারের কবি। আমি বলি, সৃজনশীল কাজ মানুষ বিভিন্ন কারনেই করতে পারে, বেশির ভাগ মানুষ করে টাকা, খ্যাতি, অমরতা ইত্যাদি কারনে। কেউ কেউ মনের আনন্দেই (Reading for pleasure) পড়াশুনা করে।


আমি মনের আনন্দের জন্যই কবিতা লিখি। আমার প্রথম লেখা “দাদু ভাষানী” কবিতাটা  প্রকাশিত হয় মাওলানা ভাষানী’র মৃত্যু দিবসে (১৭ নভেম্বর ১৯৮৯) টাঙ্গাইল শিশু স্কুলের দেয়াল পত্রিকায়, যখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। ভাবতে ভাল লাগে, ঘটনাটা ২৫ বছর আগের।


তারপর ১৯৯৬ সালের লায়ন নজরুল কলেজ, টাঙ্গাইল এর কলেজ ম্যাগাজিন “উত্তরণ” এ আমার “কিছু প্রশ্ন” কবিতাটা প্রকাশিত হয়।


তারপর জাতীয় কবিতা পরিষদের ১৯৯৮ সালের “জাতীয় কবিতা উৎসব” এ শামসুর রাহমান-এর নির্বাচনের মাধ্যমে আমি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করি।  ভাবতে ভাল লাগছে, সেই ঘটনাটা ১৭ বছর আগের।


ঢাকার মিরপুর থেকে প্রকাশিত ইসহাক বাড়ই সম্পাদিত “স্বর্গমর্ত” পত্রিকার ১৬-৩১ জুলাই ১৯৯৮ সংখ্যায় “সন্দেহ”, ০১-১৫ অক্টোবর ১৯৯৮ সংখ্যায় “অন্য মানুষ”, ১৬-৩১ অক্টোবর ১৯৯৮ সংখ্যায় “আমার আকাশে”, ০১-১৫ নভেম্বর ১৯৯৮ সংখ্যায় “নির্মম জীবন যাপন”, ১৬-৩০ নভেম্বর ১৯৯৮ সংখ্যায় “নির্জনতায়”, ১৬ মার্চ-১৫ এপ্রিল ১৯৯৯ সংখ্যায় “স্মৃতি ও বিস্মৃতি”, ০১-১৫ জুন ১৯৯৯ সংখ্যায় “হারিয়েছি সব আমি” প্রকাশিত হয়।


তারপর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত “নতুন দিগন্ত” পত্রিকার জানুয়ারি-মার্চ ২০০৩, প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখায়, শামসুর রাহমান-এর কবিতার সাথে আমার “আপোসহীন” কবিতাটি প্রকাশিত হয়।


মনেপড়ে, ২০০৪ সালের জুলাইতে আমার “Close the eyes” কবিতাটি poetry.com এ প্রকাশ করে হয়।


সবাই জানেন, কবিদের সবাই বোকা মানুষ মনে করে। কেউ কেউ মনে করেন কবিরা মেয়েলি স্বভাবের। কিন্তু সবার মাঝেই একজন কবি বাস করে তাই সবারই কবি হতে ইচ্ছে করে। কবি হতে ইচ্ছে করে বলেই মানুষ কবিতা পড়ে, গান শোনে। মনটা উদাস হলেই মানুষ সূফী কিংবা বাউল হতে চায়। যারা ধার্মিক তারাও কবি হতে চায় তাইতো রুমি, খৈয়াম, কবির এতো জনপ্রিয়।


আমার বন্ধুরা যারা (কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ) লেখালেখি করে; তারা গত ১৫ বছর যাবৎ বলে আসছে, আমি একটা কবিতার বই কেন প্রকাশ করিনা?


তাহলে শুনুন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, তার “সংস্কৃতি-কথা” বইতে বলেছেন; সাহিত্য-জগতে সাধারণতঃ ৩ প্রকার লেখক দেখতে পাওয়া যায়, ১) যারা লেখেন নিজেকে খুশি করবার জন্য – (মনের খেয়ালে); ২) যারা লেখেন সমঝদার পাঠকের জন্য – (উৎকৃষ্ট সাহিত্য) ; আর ৩) যারা লেখেন পাঠককে খুশি করবার জন্য (জনপ্রিয় সাহিত্য)।


এবার আমার আসল কথাটা বলি, “আমি মনের আনন্দের জন্যই কবিতা লিখি”। যারা আমার কবিতা (অ-কবিতা) গত ২০ বছর যাবৎ বন্ধু/সহপাঠী/সহকর্মী হবার কারনে ধৈর্য সহকারে পাঠ করেন কিংবা সহ্য করেন তাদের জন্য আমার কৃতজ্ঞতা সীমাহীন।
ধন্যবাদ।