ওযুর পানির বদনাটা লাল রঙা, পুরোটা পূর্ণ
পুকুরের পানিতে,
পুকুরের পানিতে ছিল মাছ, শ্যাওলাধরা পুকুরঘাট।
খুব সাবধানে সিঁড়িতে বসে, আমি তখন.
আমার বয়স দশ এগারো।
বাড়ির উঠোনে গন্ধরাজ ফুল, সাদা সৌরভে ভরা সাঁঝ,
শিউলি ফুলের ভোর,
জাফরানি রঙের ভোর,
আমার পিতামহের অস্তিত্ব আমার মধ্যে কথা কয়.
পুরোনো আরামকেদারাটা বসে আছে শূন্য,
সেখানে আমার পিতামহ লম্বা পাইপে হুক্কার স্বাদ গ্রহণ করে ।
পিতামহ কি আমার অস্তিত্ব বুঝতে পারে?
সব আত্মাই তো একসাথে জন্ম নেয়.
আমি তাকে চিনতাম হাজার বছর পূর্বে,
কোনো এক অচিন পৃথিবীতে আমি তাকে দেখি,
সে আমাকে।
আমি, আমার সবটুকু তাকে খুঁজে যায়,
তার অস্তিত্ব আমার প্রতিটি পদক্ষেপে।
দৃষ্টিতে তার অবারিত সবুজ,
পাকা ধানের সুগন্ধে ভরে গিয়েছে উঠোনটা,
ব্যস্ত জীবনের, ইট কাঠের সমাজে, কোনো এক দূর প্রান্তে,
অবান্তর সে আমার মধ্যে কথা কয়.
শুধু বলে যায়, প্রাণের মাঝে।
কালো তিলের পুলিপিঠা,
কী যেন কি নাম তার, আমার পিতামহীর হাতের জাদুস্পর্শ,
বড়ই এর আচারে,
উঠোনের কোনটায় ঝাঁক ধরা বড়ই গাছ,
দূর কোনো প্রান্তরে, হাজার মাইল দূরত্বে অন্য কোনো জগতে,
তারে আমি দেখি না,
যদিও বা আকাশটা তো একই.
তাকে বলেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম যারে,
তোমারে আমি অন্য কোনো সমান্তরালে,
অন্য কোনো পৃথিৱীতে চিনি, তুমি সেখানেও আমাকে,
আমার দিকে রক্তচক্ষু তুলে তাকাও!
সে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলো,
কাহিনী লিখো, কাটতি হবে ভালো!
অথচ, সব আত্মাই তো একসাথে জন্ম নেয়.
তুমি না হয় জানো না, আমি তো জানি।
প্রতীক্ষার দৃষ্টি আমার মধ্যে, যা আমি দেখেছিলাম আমার মাতামহীর শান্তচোখে।
হারিয়ে যাওয়া পুত্রের জন্য অপেক্ষা, আজ বুঝি শেষ হলো!
আজ ৩০ বছর পরে, বৃদ্ধ পুত্র ফেলে আসা মাতৃদেবীকে আবার দেখে,
দেবী মতন মা তার, সর্বংসহা।
,মৃত্যুইতো আত্মার মিলন ঘটায়,
কারণ সব আত্মাই একসাথে জন্ম নেয়,
তাই তো তোমারে আমি চিনি, তোমার হাতের স্পর্শটুকু আমাকে,
এক অনিন্দ্য পারিজাত পেলব ছোঁয়া দিয়ে যায়.
কারণ সব আত্মাই তো একসাথে জন্ম নেয়.