তখন আমার বয়স ছয় কি সাত।
বাবকে বলালাম, আমি আকাশ দেখতে চাই।
আনমনে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বাবা বললেন,
চল বেটা তবে আজ আকাশ দেখতে যাই।


সেদিন ছিল আষাঢ় মাস, ভরা বর্ষা।
পাট কাটা হয়ে গেছে সারা।
টলটলে পানি চারপাশে,
ছিলনা আষাঢ়ের বৃষ্টির ধারা।


বাবার সাথে ডিঙ্গি নৌকায় চলেছি,
আকাশ দেখবো বলে।
অন্তহীন জলের বিশাল আধার
বহুদূরের ভাটির বিলে।


শক্তহাতে বৈঠাবেয়ে চলেছেন বাবা,
আমি উদাস হয়ে শুয়ে আছি পাটাতনে।
নৌকার চারপাশের বর্ষার জল,
কি যেন বলে চলছিল আমার কানে কানে।


চারপাশে ফুটে থাকা শাপলা শালুক,
আর নাম না জানা জলজ উদ্ভিদের মাঝে দিয়ে।
আমাদের নৌকা এগিয়ে চলে,
জলের বুকে মৃদু আলোড়ন তুলে।


অবশেষে মাঝ বিলে নৌকা এলে,
বাবা ডাকলেন আমায় আলতো স্বরে।
বললেন, চেয়ে দেখ আকাশ!
চেয়ে দেখ তোর চারধারে।


সীমাহীন, পরিপূর্ন, অনন্ত আকাশ,
আমি জীবনে প্রথম দেখেছিলাম।
উপরে ছড়ানো আকাশ, পানিতে বিছানো আকাশ,
চারপাশে নীলের অপার্থিব মায়াজাল।


মনে হচ্ছিল ভেসে আছি আকাশের নীলে,
সাদামেঘের শীতলতা যেনো লাগছিল গায়ে।
নৌকাটাকে বাবা বানিয়েছিলেন হাওয়াই জাহাজ,
মিটিয়েছিলে আমার আকাশ দেখার স্বাদ।


তারও অনেক বছর পর, আমি অপেক্ষায় থাকি,
আমার সন্তান যদি বলে, বাবা চলো আকাশ দেখে আসি!
আমি তাঁকে কিভাবে দেখাবো সেই আকাশ?
ভাটির বিলে যে এখন পানি আসেনা আর!
চারপাশের শুকনো মাটি বসে থাকে জলের আশায়,
আকাশ কালো করে রাখে ইটের ভাটায়।
ডিঙ্গি নৌকা নষ্ট হয়ে গেছে সেই কবে,
আমার সন্তানের কি আর আকাশ দেখা হবে?