হে ময়নামতি!
বিস্মৃত কালের মূর্তি।
অতীতের রহস্য বক্ষে করে ধারণ,
তুমি করে আছো শয়ন,
লোহিত মৃত্তিকার গভীরে,
একান্ত নির্জনে, সবুজ ঘাসের চাদরে,
চারপাশে ছড়ানো শালের বন।
হাজার বছরের পুরোনো রাজাদের স্মৃতি,
ধূলি জমা অতীতের সুবর্ণ পুঁথি,
দৈনন্দিনের তৈজসপত্র, বাসন, বসন,
রেখে দিয়েছো সব করে যতন।
তোমার হৃদয়ের গভীরে,
উত্তর পুরুষদের দেখাবে বলে।


তোমার এককালের চকচকে দেয়ালে,
শ্যাওলা জমেছে সময়ের বিচিত্র খেয়ালে।
সারি সারি দীপজ্বলা  কোটরে,
আগাছা জন্মেছে কালের অগোচরে।
তোমার সংরক্ষিত পবিত্র অঙ্গনে,
সাধারণ প্রজাদের দিগ্বিদিক পদচারণে,
লুটিয়েছে এক কালের গৌরবের স্মৃতি,
হে ভবদেবের ময়নামতি!


ইতিহাস বিদরিয়া তবু তুমি আছো দাড়িয়ে,
সময়ের অবর্ননীয় অত্যাচার সয়ে,
তোমার বাহারি পালংক হয়তো গেছে ক্ষয়ে,
তবু অতীত টিকে আছে তোমার আশ্রয়ে।
গৈরিক বসন ভিক্ষুরা আজ স্মৃতি,
আঁধারে প্রদীপ জ্বালানো মহামতি,
আঁধারেই মিলিয়ে গেছে সেই কবে,
তুমি শুধু টিকে আছো পূর্ণ অবয়বে,
গরবিনীর মতো মাথা উঁচু করে,
সবুজ উপত্যকার বুক চিড়ে।


তোমার সৃজিত তপোবন,
তালের পাতায় লিখিত চরন,
নিয়ে যায়  অতীতের সুবর্ণ কালে,
যখন জ্ঞানের প্রদীপ উঠেছিল জ্বলে,
দিগন্তের আধার ভেদ করে,
বাংলার  শ্যামল প্রান্তরে।
তোমার দীর্ঘ ছায়া আজও ছড়িয়ে আছে,
লোকায়ত গল্পে, চিরচেনা ইতিহাসে।
আঁধার ভূমিতে এখনো জ্বালাও দিশার বাতি,
সহস্র বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ময়নামতি।