তোমার কথা আজকে আমার ভীষণ মনে পড়ে,
তুমি যে সু-দূরে ভাবতে এ-কথা অশ্রু বৃষ্টি ঝরে।
বুকের মাঝে সকাল সাঁঝে ব্যথায় করে চিনচিন
তোমার কথা স্মরণ হলে আজ বদন হয় মলিন।
দূর আকাশে মেঘের দেশেও হারিয়ে যেতে তুমি
খুঁজতাম প্রতি বৃষ্টি ফোঁটায় তোমার বার্তা আমি।
তুমি যাও-নি মেঘের দেশে বার্তা খুঁজবো কীসে
ক্ষনে ক্ষনে মন জ্বলছে যে তোমার বিরহী বিষে।
তুমি লুকানোর নীড় যদিও হতো ঐ চাঁদের ভিটা
তোমার ছোঁয়া পেতাম তবে পেয়ে জোৎস্না ছিটা।
লুকিয়ে গেলে হিমালয় কিংবা নীলাদ্রির ওপারে
অনুসন্ধানে নেমে পরতাম আমারই ডানার ভরে।
বলতো লোকে কোথা সে ডানা দেখছি শুধু বাহু
বলতাম দেখো না দেখছো তাতো ডানারই হুবহু।
ডানা আছে তবুও তুমি নেই যে আমার সিমান্তে
খুঁজলে কী পাবো জলরাশি অথবা মরুর প্রান্তে।
সেদিন তুমি কাছেই ছিলে এইতো ক'দিন আগে
মুখভার করে বসে থাকতে যেনো কী অনুরাগে!
কোথায় আমি খুঁজেছিলে ডেকেছিলে বার-বার
সামনে দেখনি অশ্রুজলে ভিজতো বুক তোমার।


কতো ভালোবাসা দিয়েছো তা ভুলিতে না পারি
ক্রন্দনে লুকাই ব্যথা আজো তোমার কথা স্মরি।
পার হতো রাত আসতো দিবস দেখতাম ঐ মুখ
ভুলতাম সবি মনেরই ভিতরে জমিয়ে রাখা দুখ।
তোমার কোমরে শক্তি ছিল না বল গেলো শেষে
তবুও তুমি সেভাবেই ছিলে কত আমাদের পাশে।
দেখি নি একদিন হেঁচড়ে-হেঁচড়ে দূরে চলে গেলে
খুঁজতে গিয়ে পেয়েছিলাম তোমাকে সন্ধ্যা কালে।
হেঁটে আসতে পারো নি সেদিন পাদু’টো না চলে
কত ভারী শরীর তোমার নিতে পারি নি কোলে।
নারকেলের সেই লম্বা পাতা করলাম ঠেলাগাড়ি
কত না কষ্টে দিলাম বসিয়ে তোমার হাতটা ধরি।
অন্ধকারে কেউ ছিল না এনেছিলাম টেনে ঘরে
কত -যতনে বিছানা বালিশ দিয়েছিলাম ঝেড়ে।
ক্ষুধা লাগলে খেতে চাইতে দিতে হতো সাথে নুন
পানি দিতে দেরি হলে হতে রেগে -মেগে আগুন।
তোমার কথা বোঝার মতো মানুষ ছিল যে কম
তুমি কী বলতে বুঝতে পারতাম আমি একদম!
সহসা তোমার মনের মাঝে কত কথা লুকায়িত
কে বুঝে কে করে খেয়াল তোমারি মনের মতো।


কতো কষ্টে দিনাতিপাত করছো দেখেছি চোখে
তবু -যে তোমার ভাস্বর ছিল ফুলেল হাসি মুখে।
তুমি অসহায় তবু না চাহুনি ছিল যে তেমনিতর
রবি-শশীরা মুচকি হাসতো তোমারি মুখের পর।
রুপালি চাদরে মোড়া ছিল বোঝেনি শীতে কাবু
শীতের রাতে উনুনের আঁচে গরম রেখেছো তবু।
গ্রীষ্মের সময় কত'টা মজার তুমি ছিলে বুঝেছি
আজ মেলেনা সে -সময় আমি কতবার খুঁজেছি।
দিনে দিনে বয়সের ভারেই দূর্বল হয়ে গিয়েছিলে
সর্বনাশা ব্যধির দায়েই তুমি বিছানায়শায়ী হলে।
নড়ে-চড়ে যাবে দূরে আগের সে শক্তি আর নাই
ক'বছর ছিলে শয্যাশায়ী কী করে-তা ভুলে যাই!
কয়েকটা বছর অতিক্রান্ত হলো কিছুটা সুস্থতায়
ভালো লাগতো তোমাকে নিয়েই একটু ব্যস্ততায়।
এরই মধ্যেই দিন -শেষ হবে পারি নাই তা বুঝতে
তখনও তো ছিলাম ব্যস্ত খুব ভালোবাসা খুঁজতে।
জীবনের প্রয়োজনে সামান্য কদিনের হলো দূরত্ব
বুঝি নাই সেদিন সাঙ্গ হবে তোমার সাথে মধুরত্ব।
বিদায় কালের শেষ দেখাতে গোপনে অশ্রু ঝড়ে
বুঝি নাই তখন হৃদয়ে আমার কেমনই যেন করে।


এমন কেন বোঝে নাই মন হবে নাকি আর দেখা
তা না হলে মন আমার করছে কেন আজ খাঁ-খাঁ।
অশ্রু লুকিয়ে ছেড়েছিলাম সেদিনের মতো বাড়ি
কিছুদিনের তরে সুদূরে আমার দিতে হলো পাড়ি।
দূরে কাটে দিন মুখ মলিন লাগে না কিছুই ভালো
মনে হতো হায় বাড়িতে মোর কী জানি কী হলো!
এভাবে সময় পার হতে-হতে যেই দিন পনের হয়
এমনি সময় বাড়ি থেকে যে প্রিয়র খবর পৌঁছায়।
ছিলাম আমি এমন চাপে সুযোগ-ও হয়নি আসা
দূরে থেকে দিন কাটছে বাড়ছেই আমার হতাশা।
এর দুদিন পরে চিরনিদ্রাতে শায়িত আমায় বলে
মন আর থাকতে পারে? আসিলাম তখনই চলে।
সে পথের দূরত্ব কম ছিলো না দেরি হয়েছিল ঢের
এসে তাও চাঁদ মুখখানি যে দেখতে পারিনি ফের্!
এসেছিলাম ভিজিয়ে এই বুক সেদিন অশ্রু জলে
ততক্ষণেই ঢেকে ফেলেছে প্রিয়কে মাটিরো তলে।
মাটির উপরে গড়াগড়ি খেলেও পায় নাকি সান্ত্বনা
এইতো বুঝি পেলাম শেষে ভালোবাসার বিড়ম্বনা।
হায়'রে আলো আঁধার করে লুকিয়ে রেখেছে হেথা
ঢাকলে কী আর বলবে কভুও আমার সাথে কথা?


ভালোবাসার ওই চাঁদটা বুঝি ঢাকলো মেঘালয়ে
বিশাল একটা স্মৃতির পাহাড় মোর বুকে চাপিয়ে।
সইবো কেমনে এই যন্ত্রণা আমি বুঝতে পারছিনা
মন বলে তুমি মাটির তলে তবুও গো ছাড়ছি না।
সামান্য মাটির স্তর আজ সব করে দিল আলাদা
অসহনীয় জ্বালা করছে মোর আজ-কাল সর্বদা।
দিনের শেষে ফের্ আসি ফিরে যখনই আমি ঘরে
কে যেন নেই তাই তো পূর্ণ ঘর ভীষণ হাহাকারে।
সেই বিছানা বালিশ যে আজ শুন্যই পড়ে থাকে
তীব্র দহন অন্তঃপুরে তার সেই স্মৃতিগুলো দেখে।
তার বসার স্থানে আজ আর কেউ তেমন বসে না
তার মতো আর খিলখিলিয়ে কেউ তো হাসে না!
আজ সেই রতন পায় কী যতন বাঁশ বাগানে ওই
কেঁদে কেঁদে দয়ার্দ্র সেই প্রভুর কাছে আজ কই।
জানি না রব তুমি জানো সব তোমার ফায়সালা
জান্নাতের সুবাস ছড়িয়ে করো করবটা উজালা।
আজাব ও শাস্তি হয়ে থাকলেও জলদি তা হটাইও
রহিম-রহমান নামের গুনেই গুনাহ সব মিটাইও।
সারাটাক্ষণ মিনতির স্বরে দু'য়া করি পরানো ভরে
অনেক বেশি ভালো রেখো প্রভু প্রিয়কে পরপারে।


তারিখঃ ১৬/০৬/২০২২ইং
সন্ধ্যাঃ ০৬:০৬ মিনিট।


বিঃদ্রঃ- কবিতার আলোচ্য চরিত্র হলো আমার প্রাণপ্রিয় নানু। একটা সময় আমাদের সাথে কত আনন্দে ছিল! আজ সঙ্গীছাড়া, আলোহীন কবরের বাসিন্দা। দু'য়া চাই আল্লাহ তা'য়ালা যেন ক্ষমার দৌলত দান করে জান্নাতে ঠাঁই দেন। আমীন!