খলা পেরিয়ে রাস্তায় নামতেই মনে পড়লো বইয়ের কথা
গরুকে ঘাস খাওয়ানোর ফাঁকে বই পড়া তার অভ্যাস
আবার বাড়ির পথ ধরা, তাই-
বড়চাচার স্কুল থেকে ফেরাটা চোখে পড়ে নি
তাহলে সে কখনো ফিরতি পথে পা বাড়াতো না
হয় তো ভাববে তাকে দেখে পালাচ্ছে
কিন্তু সেটাই ঘটলো, ঘর থেকে বই নিয়ে বেরোবার আগেই
ভয়ানক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলো
বাড়িঘর কাঁপানো বজ্রপাত!
বড়চাচার এই ক্রুদ্ধমূর্তিকে সবাই বিজলী নামে ডাকে
মুখের ভেংচি দেখলে যে কারোর জল খসে যেতে পারে
অনীকেরও ঘটেছিল এর আগে একবার
এই যেমন আজও, পা গড়িয়ে জল হাফপ্যান্টটা ভিজিয়ে দিলো
তবে কেউ দেখে নি বলে কিছুটা রক্ষে, এর আগে তো
পিচ্ছি ভাগনের সামনেই ব্যাপারটা ঘটেছিল।
বড়চাচার মুষলধারে বর্ষণের সময় কিছুই বুঝার উপায় নেই
তারপরও যে সারমর্ম উদ্ধার করা গেছে, তাহলো-
অনীকের মা-কে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে
তাকে দেখে পালিয়ে বেড়ায় অনীক, কাজের ফরমায়েসের ভয়ে
এসব নাকি ছেলেকে শিখিয়ে মাথায় তোলা হচ্ছে!
কাজ ছাড়া তো এই বাড়িতে এক মুহূর্ত থাকার উপায় নেই
সকালটা শুরু হয় গোয়ালঘর থেকে গরু-ছাগল বের করা দিয়ে
তারপর খড় দিয়ে, ঘাস কেটে কোনো রকমে গোসলটা করে
নাস্তার পর ইস্কুলে যাওয়া। ইস্কুল থেকে ফিরে আবারো গরুকে ঘাস খাওয়ানো।
সন্ধ্যের সময় গোয়ালঘরে ওদেরকে বাঁধার পরই কাজের সমাপ্তি
তারপর কূপির ম্লান আলোতে এশা পর্যন্ত পড়া-লেখা
বেশি রাত পড়াও মানা, কেরোসিনের হিসেব বড় কড়া।
এতো কথা শোনেও অনীকের মনে কষ্ট নেই-
চোখের জলটা শুধু ওর মায়ের জন্য!
বাবার অসুস্থতায় মাকে নিজ বাড়িতেই দাসী সাজতে হয়েছে
সবার ঝুঁটা খাওয়ার পরও খাওয়ার খোঁটা নিত্য সঙ্গী।
কারো প্রতি কোনো অনুযোগ নেই।
অনীক বইটা নিয়ে বিজলী থামার আগেই কেটে পড়ে
মন ভালো করার, সঙ্গ দেওয়ার
ভালোবাসা আর ভাবনার চিরবন্ধু তার কাছে এই বইগুলো
মাযের করুণ মুখ দেখার চেয়ে কষ্ট পৃথিবীতে আর কী হতে পারে?
গরু আর বই, দুইয়ের ভিতর হারিয়ে যেতে চায় সে
আর স্বপ্ন দেখে ভিন্ন এক আগামীর!