উইলিয়াম এ এস ঔডারল্যাণ্ড;
কয়জন বাঙালী বা বাঙলাদেশী জানে তাঁর নাম?
যদি বলি, স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষের যোদ্ধা ছিলেন তিনি;
নির্লিপ্ত শ্রদ্ধা অথবা প্রশ্নবোধ জাগতে পারে কারো মনে।
যদি বলি, ৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা;
অনেকে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করবে, সত্যি কি তাই?
যদি বলি, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্যে "বীর প্রতীক"খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা;
বাঙালী না বাংলাদেশী? স্বাধীনতার পরে কোনপক্ষের শক্তির পক্ষে ছিলেন তিনি?
কার কী প্রশ্ন হবে জানি না।


আমি শুধু প্রশ্নহীন শ্রদ্ধায় মাথা করি অবনত।
আমি শুধু জানি তিনি স্বাধীনতার পক্ষের যোদ্ধা ছিলেন।
১৯৭১-এ বাটা সু কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর টুঙ্গীর কারখানায়।
২৫-শে মার্চ কালোরাতে পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর বর্বর সার্চলাইট
গণহত্যার চিত্রগ্রাহক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেই চিত্র পরিবেশক।
পাকিস্থানী বাহিনী না জানা পর্যন্ত
পাকিস্থানী সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে
মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গোপণ তথ্য পরিবেশক।
সবশেষে সেক্টর ১ এবং ২ নম্বরে
কারখানা শ্রমিকদের নিয়ে গড়া গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক ও প্রশিক্ষক।
মুক্তিযুদ্ধের পুরোভাগে নেতৃত্ব দিয়ে  
টুঙ্গী-ভৈরব রেললাইনের ব্রীজ, কালভার্ট ধ্বংশকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যোদ্ধা, বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা;
২০০১ সালের ১৮ই মে থেকে শুয়ে আছো চিরনিদ্রায়
অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের কেরাকাটা সেমিট্রিতে।


তোমার জাতীয়তা কী? তোমার ধর্ম কী?
এখন তুমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে না বিপক্ষের শক্তি?
তোমার নাম কি কোথাও উচ্চারিত হবে বাংলাদেশের ৪৮তম স্বাধীনতা দিবসে?
কোন প্রত্যাশায় অবাঙালী হয়ে বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে প্রাণের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে?
এসব প্রশ্নে আজ তোমার ঘুম ভাঙাতে আসিনি,
কারণ স্বাধীনতার পক্ষের যোদ্ধার কাছে এসব প্রশ্ন অবান্তর।
আর আমার মতো একজনের কাছে
তোমার প্রতি অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছু নেই।
তুমি যদি শুনতে পাও আমার সেই নির্বাক শ্রদ্ধা, তবেই আমি ধন্য।