ওগো বন্ধু! তুমি গেলে আজ চলে
কতটুকু ব্যথা বেদনা বুকে, কাউকে কিছু না বলে।
মহামিলনের পূর্বে বুঝি চাই মহাবিচ্ছেদ
মহাস্রষ্টার দরবারে দিতে শেষ প্রার্থনা, খেদ।
মহাস্রষ্টা নিয়েছিল তাই নিজেই তৈরী করে
মহামিলনের মহামঞ্চ নিঃসঙ্গ হোটেল-ঘরে।


পৃথিবী যখন স্তব্ধ-নীরব, চাঁদ-তারাদের দল
তোমারে পেতে নিজেদের বুকে হলো বড় চঞ্চল।
আর চঞ্চল হয়েছিল জানি শীতলক্ষার জল
কী যেন ব্যথায় কেঁদে গেল ঢেউ দুকুলে ছলাত-ছল।
যেখানে তোমার শেকড় ও নাড়ীর আদি নোঙরের টান
সেথা বেজে গেল সুদূরের সুর - তোমার বিদায়-গান।
জগতের মায়া ছিন্ন করে পেলে স্বর্গের ঠিকানা
ব্যস্ত পৃথিবী, কোথা ঝরে তারা, কতটুকু কার জানা?
স্বজনেরা জানে এই বিচ্ছেদ কতখানি বেদনার
চিরতরে তারা আজ যা হারালো, পূরণ হবে না আর।


আমরা তো জানি কেমনে তুমি ভেঙে দিতে নীরবতা
কেমনে তোমার কলম লিখেছে সত্য-ন্যায়ের কথা।
আর লিখে গেছো অত্যাচারীর মহাধ্বংসের শমন
সদা লিখে গেছো কেমনে আসে জীবনের শেষে মরণ -
চলন্ত ট্রেনের দীর্ঘ পথে মৃত্যু এক স্টেশন
যেখানে ঘটে দেহ ছেড়ে তার আত্মার উত্তরণ।
তোমার আত্মা আজ সেখানে, বন্ধু গো থেকো সুখে
তোমার ছড়ানো প্রেম আছে জেনো পৃথিবীর বহু বুকে।


আজও দেখি সেই চপল হাঁটা তোমার দৃপ্ত পায়
প্রাণোচ্ছল হাসি, ঠাট্টা বুয়েটের আঙিনায়
জীবনের সেই শ্রেষ্ঠ সময় একই সে ছাত্রাবাসে
দুঃখ-ব্যথার মাঝে স্মৃতিতে আজও আনন্দ হাসে।
তেমনি দৃপ্ত হেঁটে গেছো তুমি জীবনের প্রতিদিন
নীতিতে ভরা জাগ্রত বুকে, মিথ্যায় আপোষহীন।


যাত্রা পথে আমরা ক'দিন রইলাম পিছু পড়ে
নিশ্চয় তুমি আমাদের নেবে ওপারে বরণ করে।
তুমি তো জানো সামনে অচিরেই সেই বরণের ধুম
তার আগে হোক তোমার ক'দিন মহাশান্তির ঘুম।
------------------------------------------


* বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ও একই ছাত্রাবাসে বসবাসরত এক বন্ধু পরিবারসহ বাস করতেন আমেরিকায়। কর্তব্যের ডাকে এক হোটেলে নিঃসঙ্গ রাত্রি যাপনের সময় সোমবার ভোরে heart attack হয় এবং সেখান থেকে হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সদা প্রাণ-চঞ্চল এই বন্ধু ইংরেজি ভাষায় খুব দক্ষ লেখক ছিল। রাজনীতি, দেশপ্রেম, ধর্ম, সাধারণ মানুষের জীবন ও মৃতু চিন্তার উপর অসঙ্খ্য ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধ এবং কবিতা লিখে গিয়েছেন এই বন্ধু। তার চিন্তায় আমার আজকের নিবেদন এই 'বন্ধু বিদায়'।