যেথা যান জাঁহাপনা, সাথে তাঁর যায় বাহলুল
যে কথাই বলে সে, জাঁহাপনা ভাবেন তা ভুল।
বাহলুল তবু সাথী প্রতিদিনের অপরাহ্ন ভ্রমণে
সমুদ্র-তীরের পথ দিয়ে ধীরপদে হাঁটে দুজনে।


কদিন হলো, সেই পথের একপাশে বসে থাকে
শীর্ণদেহী ভিক্ষুক - যদি কেউ ভিক্ষা দেয় তাকে।
একশত স্বর্ণমুদ্রা - জাঁহাপনার মতোই তাঁর ভিক্ষা
পেয়েও ভিক্ষুক বসে থাকে, করে কারো প্রতীক্ষা।


অতপর আসে এক লোক -দরিদ্র হতভাব চেহারায়
সে ভিক্ষুক তার কাছ থেকে সামান্যই ভিক্ষা পায়।
অথচ সে ভিক্ষুক তারপরই ত্যাগ করে সেই স্থান
লক্ষ্য করেন জাঁহাপনা, বাহলুলের কাছে উত্তর চান।


বাহলুল ভেবে বলে, জাহাপনা! তবে এই হোক
কাল পরে ভিক্ষা দেবেন, আগে দিলে ওই লোক।
জাঁহাপনা ভাবেন, বাহলুলের মগজের কী উন্নতি;
তাই হবে, তাই হবে, তোমার প্রস্তাব উত্তম অতি।


পরদিন দুজনেই অদূরে ওঁত্পেতে অপেক্ষা করে
দরিদ্র লোকটি এসে ভিক্ষা দিল তার একটু পরে।
তারপরই ভিক্ষুক চলে যায় ত্যাগ করে সেই স্থান
অপেক্ষা করে না নিতে জাঁহাপনার অতি বড় দান।


ক্ষিপ্ত আর হতাশ জাঁহাপনা বাহলুলকে ধমকায়,
ভিক্ষুকের এ ধৃষ্টতা কিছু আসে কি তোমার মাথায়?
বাহলুল বলে, আমার তো আগেই ছিল সব জানা -
বড় দান পেলে ছোট দানের আশা করে কোন্ কানা?


ক্ষিপ্ত জাঁহাপনা হুংকার ছাড়েন রাগে আর ক্রোধে
একশত স্বর্ণমূদ্রা ছোট দান ভাবে কোন্ নির্বোধে,
অথচ দরিদ্রের সামান্য আধলাকে ভাবে বড় দান?
হেন ঠাট্টায় বাহলুল হারাবে কি আজ তোমার প্রাণ?


নির্বোধ হাসি হাসে বাহলুল, অতপর শান্তভাবে বলে,
শান্ত হউন জাঁহাপনা, অহেতুক রাগে যাবেন না জ্বলে।
দরিদ্র লোকটি অতি দরিদ্র, দিনে মাত্র এক মূদ্রা আয়
অর্ধেক দান করে, বাকি অর্ধেকে কষ্টে সংসার চালায়।


দোজাহানের শাহেনশাহ যে, সে কি কারো শতমূদ্রা যাচে?
সে শুধু খুঁজে ফেরে, যদি বড় হৃদয় পায় কারো কাছে।
ক্ষুধার্ত থেকেও যে দরিদ্র দান করে তার অর্ধেক আয়
তার চেয়ে বড় দান এ জগতে করে কোন্ রাজায়?