দিনান্তের আঁধার ধরণীর বুকে,
তখনো জ্বলেনি আলো গৃহের অভ্যন্তরে।
বেল বাজার শব্দে খুলে দিলাম সদর দরজাটা
প্রবেশ করল পরিচিত দুজন - নীরব, নির্লিপ্ত মুখে।
হলওয়ের লাইটের সুইচটা অন করলাম -
আলো জ্বলল না।
একে একে ঘরের সবগুলো সুইচ অন করলাম -
কোথাও আলো জ্বলল না -
হঠাত নিদ্রাভঙ্গ হলো।


উঠে এক গ্লাস জল খেলাম
তারপর অন্ধকার ঘরে একটু পায়চারী করলাম।
আধোঘুমে স্ত্রী প্রশ্ন করলো, কী হয়েছে? কোন অসুবিধা হচ্ছে?
উত্তর দিলাম - না কিছু না -
আবার শুয়ে পড়লাম।
জীবনের কোন্ আলো আর জ্বলবে না,
এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।


যে আলোটা আমার গর্ভধারিনী মা
অন্য এক মহিয়সী নারীর হাতে দিয়ে
তেরো বছর আগে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছিলেন,
বুঝলাম সেই আলোটি নিভে গেছে পরদিন বিকেলে,
টেলিফোন কানে নিয়ে আমার স্ত্রীর হৃদয়বিদারী কান্নায় -
আমার মা আর নেই, আমার সব শেষ হয়ে গেল।


গর্ভধারিনী মায়ের অবর্তমানে
মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা আর আশীর্বাদে
আমার যে শাশুড়ী মা
বিগত তেরোটি বছর সিক্ত করেছেন
আমার শুকনো হৃদয়, তিনি নিয়েছেন চিরবিদায়।
বেদনার বিদ্যুত স্ফুলিঙ্গ যতই দিক দহন-জ্বালা,
বজ্রের গর্জনের যতই ইচ্ছা হোক প্রকম্পিত করে দশদিক,
শ্রাবণের বর্ষণধারা তখন বেমানান।


সাতাস ঘন্টার মধ্যে কাঁদিনি -
পাড়ি দিয়েছি আকাশপথ, স্থলপথ, জলপথ -
সুদৃপ্ত শান্তনার বাণী কণ্ঠে - তাঁর কন্যা,
আমার সহধর্মিনীকে মায়ের মুখটি
শেষবারের মতো দেখাবার প্রত্যয়ে।


অবশেষে যখন পা রাখলাম,
বাড়ীর সমুখের মাটিতে, জনারণ্যের ভীড়ে,
আমাদের কান্না আর অশ্রুজল মিশে গেল
শত শত মানুষের কান্নার রোল আর অশ্রুজলে।


মাগো! নিস্প্রাণ শুয়ে আছো,
অথচ কী স্বর্গীয় আলোতে উদ্ভাসিত তোমার মুখ!
শেষবারের মতো আলতো করে বুকে ছুঁয়ালাম তোমার চরণদ্বয়,
সেই একই প্রশান্তির মাঝে আজ প্রথম বুকটা হাহাকার করে উঠলো -
কেউ পরম স্নেহে বুকে তুলে নিয়ে
মায়ের সেই চুম্বনের পরশটা দিল না কপালে!


পরের কটা দিনে বুঝলাম,
তুমি এক সাধারণ নারী
কী করে সামান্য স্নেহ, ভালোবাসা ও দানে
অসাধারণ মা হয়ে উঠেছিলে অসংখ্য মানুষের।
তোমাকে হারানোর কারো বেদনাকেই
আমাদের বেদনার চেয়ে ছোট করে দেখতে পারিনি।


সমস্ত কর্তব্য শেষে
আবার ফিরে এলাম সেই ঘরটিতে।
যে সুইচটাই অন করি, আলো জ্বলে -
কিন্তু তার মাঝে কিছু অন্ধকার গহবর দেখি,
দেখি ওরা যেন মুখ নেড়ে কিছু বলছে।
কান পাতি, শুনতে পাই -
ওমন পরম আস্থায় মা বলে আর কাকে ডাকবি?


হে পরম করুণাময়!
তুমি নিশ্চয় শুনছো,
আমরা আমাদের মায়ের জন্যে
তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ বেহেস্ত চাই।
------------------------------


## আমার শাশুড়ী আম্মা ১৯/৪/২০১৯ তারিখ শুক্রবার বেলা ৪টার সময় ইহলোক ত্যাগ করেন। আমার স্ত্রী এবং আমি দেশে যেয়ে পৌঁছাই ২০/৪/২০১৯ তারিখ সন্ধ্যা ৭টার সময়। তারপর দাফন সম্পন্ন হয়। ১/৫/২০১৯ তারিখে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এসেছি।