মাগো তোমায় মনে পড়ে
সে সব দিনের কথা বল ভুলি কেমন করে?
ভাতের পাশে শাকটি দিয়ে ডাকতে খোকন আয়
অনেক খানি বেলা হলো, পেটটাতে তোর একটু কিছু নাই|
ভাতের থালা ছুড়ে দিয়ে তোমার খোকন পালায়
মাছ, মাংশ, ডিম ছাড়া কি খাবার খাওয়া যায়?
বলতে তুমি ভাত জোটেনা, শাক জোটেনা ওসব পাব কোথায়
বেলা হলো তুই না খেলে কেমন করে খায়?
মাগো তোমার গোধরা সেই দুষ্ট ছেলে বসতো খিড়কী দ্বারে
তুমি যেতে পাশের বাড়ি ডিম যদি পাও ধারে|
রান্না হলে সে ডিম খানা ডাকতে, খোকন আয়
মায়ের কোলে বসে তখন খোকন সোনা খায়|
খোকন বলে মাগো তুমিও একটুখানি খাও
তোমার পেটে ক্ষুধা তবু সবটা কেন আমার মুখে দাও?
বলতে তুমি, এই যে খোকন পেটটাতে তোর রাখলাম আমার হাত
পেটটা আমার ভরেই গেল আর কি লাগে ভাত?


মাগো তোমায় মনে পড়ে
বুকের মাঝে ব্যথা বাজে চোখ যে জলে ভরে|
সন্ধ্যা বেলায় ফিরে এলাম ছিপ ঝুলিয়ে কাঁধে
নদীর ঘাটে মাঝ ধরেছি, মা যদি তা রাঁধে|
কেরোসিনের প্রদীপ জেলে মাছটা দিলে কেটে
বোন আর আমি ধুতে গেলাম, ফেললে মশলা বেটে|
খাওয়ার সময় আমার পাতে দিলে মাছের মাথা
বললাম আমি, মাগো তুমি কিজে কর যা তা
যা ছিল তার সবই দিলে তোমার জন্যে কই?
বললে তুমি, অনেক খাবে যদি আমরা বড় হই|
বললে তুমি, তুই মাথা খা, তোর মাথা হবে ভালো
লেখাপড়া করে যে তুই এ সংসারে জ্বালবি সুখের আলো
এমন মাছ আর মাথা সেদিন আসবে কত ঘরে
আল্লাহ তাদের নিশ্চই দেই যারা ধৌর্য ধরে|


আজকে আমার সবই আছে চাওয়ার কিছু নেই
মাগো, বুকের ভেতর তোমার অভাব ভুলায় কথার খেই|
একটি চাওয়া বাকি আছে, আজ চাইব তা প্রাণ ভরে
আল্লাহ, মাকে তুমি রেখো তোমার বেহেস্তের এক ঘরে|
যে মা আমার দিয়েই গেছে নেইনি কারো কাছে
তোমার দ্বারে তার বেহেস্ত আমার চাওয়া আছে|


** আজকের এই মাতৃদিবসে মাকে কিছু দেওয়ার ধরা ছোঁয়ার বাইরে| তাই আমার "মাগো তোমায় মনে পড়ে" কবিতার কিছু অংশ সামান্য পরিবর্তন করে পুন:প্রকাশ করলাম এখানে|