যাত্রাশুরুর বিস্তৃত তথ্য আজ বিস্মৃত প্রায়!
অনুমিত সহস্রাধিক আলোকবর্ষ পূর্বে
পৃথিবীর বুক থেকে উৎক্ষেপিত যানে  
যাত্রা শুরু ব্রহ্মান্ডের অনন্ত পথে।
অতঃপর, গাণিতিক ত্বরণে পরিক্রমা
সহস্রাধিক ছায়াপথ, অসংখ্য গ্রহ ও নক্ষত্র।

পরিক্রমার মুগ্ধময় তন্দ্রায় আচমকা সম্বিৎ;
পরিচিত গন্ধ, শুভ্র জলদের নমনীয় পথ হাঁটা,  
ফাঁকে ফাঁকে সবুজ অরণ্যে বর্ণালী ফুলের সমারোহ -
সহসা হৃদয় জেগে উঠে দেয় চিৎকার 'পৃথিবী'।
চিৎকারে ঘুম ভেঙে যেন কারা এলো ছুটে
জানালো তারা পৃথিবীর সীমান্তরক্ষী,
পৃথিবীর নাগরিকত্বের সনদপত্র চায়
পৃথিবীতে আমার পুনঃপ্রবেশের পূর্বে।


তীব্র প্রতিবাদ জানালামঃ
আমি তাদেরই এক জ্ঞাতি, একজন মানুষ
কিছুদিন পূর্বে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া এক প্রবাসী
নিজ বাসভূমে প্রত্যাবর্তনে নাগরিকত্বের সনদপত্র চাওয়া
নিতান্তই মনুষত্বের অবমাননা।


আমাকে জ্ঞাত করা হলো
ইতিমধ্যে পৃথিবী বদলে গেছে অনেক;
মানুষ বিভক্ত জাতি, ধর্ম, বর্ণে।
প্রমান স্বরূপ সুদূরে কয়েকটি জায়গায়
আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।


আমি বললাম, ও তো মেঘ আর কুয়াশার মাঝে
বজ্র গর্জনে বিদ্যুতের ঝলকানি।


আমার অজ্ঞতায় বিস্মিত সীমান্তরক্ষীরা জানালো,
ও গুলো পৃথিবীর সভ্যতার মূল উপকরণ -
আগুনের ফসল, যার আধুনিক রূপ
ঘনীভূত শক্তির ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরক,
আর তার সর্বাধুনিক ব্যবহার
ক্ষমতাধরদের অপছন্দনীয় জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদন যজ্ঞে।


অপছন্দনীয় জনগোষ্ঠী? ওরা মানুষ নয়?
নিরুত্তর সীমান্তরক্ষীরা পৃথিবীর নাগরিকত্বের দরখাস্তের
ফর্মটি এগিয়ে দিল নীরবে পূরণের জন্যে।
অজ্ঞতার কারণে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের ঘরগুলো
অপূর্ণ রেখে জমা দিয়েছি দরখাস্তটি।
প্রক্রিয়ার শেষধাপে পৃথিবীতে আমার
বসবাসযোগ্যতার নাকি পরীক্ষা হবে।
তার পূর্বের যে কোন দীর্ঘ ধাপেই
আমার দরখাস্তটি নাকচ হয়ে যেতে পারে
উপযুক্ত স্বজন-জামিনদারের অভাবে।


আমি এখন জনশূন্য বিরানভূমিতে পৃথিবীর সীমান্তরেখায়,
পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায়,
জানা নেই কোন স্বজন-জামিনদারের ঠিকানা পৃথিবীর বুকে।
পাঠালাম আমার এই শেষ আবেদন -
আছে কি কেউ সহৃদয় মানুষ
যে জামিনদার হবে আমার দরখাস্তটির?