ব্রহ্মাণ্ডের মহারাজা মৃত্যুদূতকে ডেকে
বললো একদিন, ধরার বুকের অমুক রাজ্য থেকে
নিয়ে এসো তমুক রাজার আত্মা ছিন্ন করে
রাজ্যে সবাই জানুক তাদের রাজা গেছে মরে।


যেমন আদেশ তেমনটা কাজ - আত্মা হলো কাড়া -
রাজপরিবার, রাজ্যে সেদিন নামলো শোকের ধারা।
রাজার আত্মা যাত্রা করে মৃতুদূতের সাথে
মহারাজার কাছে যেতে বড়ই অনিচ্ছাতে।


দেখলো চেয়ে ছেলেমেয়ে এবং প্রাণের রানী
বুক ফাটানো কান্নাতে সব ঝরায় চোখের পানি।
দেশের প্রজা, উজির, নাজির এবং সেনাপতি
সবাই কাঁদে - রাজা বিনে কী হবে দুর্গতি?


এ সব দেখে রাজার আত্মা করলো অভিযোগ
তোমরা কেন আমার রাজ্যে ঘটালে দুর্যোগ?
তুমি এবং মহারাজা শুধুই কী নির্দয়
নাকি আমার জনপ্রিয়তায় পেয়েছিলে ভয়?
তাই কি আমার দেহ থেকে আত্মা নিলে কেড়ে
বিদায় নিতে বাধ্য করলে সবার ভালো ছেড়ে?


রাজার কথা শুনে তখন বললো মৃত্যুদূত
তোমার রাজ্যের মানুষগুলো বড়ই যে অদ্ভুত!
আত্মা যখন ছিনিয়ে আনি এমনভাবে কাঁদে
মহাপ্রলয় নামলো যেন আমার অপরাধে।
ক্ষণিক পরেই রাজ্যে আবার এমন কিছু ঘটে
ভাবি তখন কী উল্লাসের কাজ করেছি বটে!


চমকে উঠে রাজা বলে, বলো কী, উল্লাস?
আমি বিনে আমার রাজ্যে? করি না বিশাস।


হঠাত তখন মহারাজার কণ্ঠ এলো ভেসে;
আত্মাকে তার ফিরিয়ে নিয়ে যাও তুমি তার দেশে।
মহারাজার আদেশ পেয়ে আবার গেল ফিরে
মৃত্যুদূত আর রাজার আত্মা দুজন ধীরে ধীরে।


রাজার রাজ্যে দুজন তারা করলো যখন প্রবেশ
দেখলো চলে রাজ্য ভরে খুশির ধারা অশেষ।
সকল প্রজা রঙিন সাজে এক মহাউল্লাসে
নৃত্য-গানে ভোগের পানে আনন্দে সব হাসে।


শুধিয়ে জানে নতুন রাজার হচ্ছে অভিষেক
তারই মঙ্গল প্রার্থনাতে দেশের যতো শেখ,
ব্রাহ্মণ আর নানান ধর্মের যতো ধর্মগুরু
কদিন আগে মহাসভা করেছে তাই শুরু।
শিল্পীরা সব দিবানিশি চালায় গান ও বাদ্য
খুশীতে সব নৃত্য করে পেয়ে রাজার খাদ্য।


রাজবাড়িতে ঢুকে দেখে রাজার দুটো ছেলে
যুদ্ধ করে রাজ্য পেতে অন্য ভাইকে ফেলে।
মেয়ের স্বামী মেয়ে মিলে করে সমর্থন
বেশী সম্পদ দেবে বলে যখনই যে জন।
চেয়ে দেখে রানী বসে সেনাপতির কোলে
গলায় পরায় প্রেমের মালা সম্মোহনী-বোলে।


আত্মা বলে মৃত্যুদূতে, খুলেছে মোর চোখ
যা চেয়েছে মহারাজা এবার সেটাই হোক।