একদা স্বর্গে দেবতা ডাকিলেন আটজন অনুচর
কহিলেন যাও ধরনীর বুকে দেখে এসো সুন্দর।
সুন্দরতম তিনটি জিনিস আনিও করিয়া চয়ন
যাহা দেখি আমি মুগ্ধ হবো, জুড়াবে আমার নয়ন।


ধরনীর বুকে আসিয়া দেখে সবকিছু সুন্দর
যাহা দেখে তাই হৃদয় কাড়ে, বিমুগ্ধ-মনোহর।
ধরনীর বুকে ঘুরিল তারা প্রান্ত হইতে প্রান্ত
সবই সুন্দর! কোনটি নেবে, হলো তাই বিভ্রান্ত।
অবশেষে দেখে একটি গাছে ফুটিয়াছে কত ফুল
ভাবিল এটিই সুন্দরতম, না নিলে হইবে ভূল।
যতনে সেটি একটি বাকসে লইলো তাদের সাথে
এখনো সঙ্গে নেওয়ার তরে দুইটি রইলো হাতে।


খুঁজিতে খুঁজিতে দেখিল তারা একটি মাদুর 'পরে
একটি শিশু ঘুমায়ে রয়েছে, জগত আলোয় ভরে।
দ্বিতীয় বাকস ভর্তি হইলো ঘুমন্ত-শিশু-মাদুরে
সুন্দরতম তৃতীয় বস্তু ভাবিল খুঁজিবে ঘুরে।
হঠাৎ দেখিল জড়ায়ে যতনে একটি মা তার চাঁদরে
ঘুমন্ত শিশু ভূমিতে শায়িত বুকে লয়ে অতি আদরে।
অতি সযতনে লইল তুলিয়া তাদের তৃতীয় বাকসে
ভাবিল আরও যাহা কিছু আছে জগতের মাঝে থাক সে।


দেবতা-দাসেরা বাকস লইয়া চলিল পৃথিবী ছাড়ি
অনেক সময় কেটে গেল দিতে সুদূরের পথ পাড়ি।
অবশেষে এলো স্বর্গের দ্বারে আনন্দ ল’য়ে বুকে
প্রথম বাকস খুলিল তাহারা দেবতার সম্মুখে।
দেখিল মধ্যে শুকনা ফুল আর জীর্ণ মলিন পাতা
দেবতার রোষে যায় বুঝি কাটা আজ তাহাদের মাথা।


বাঁচাইতে প্রাণ খুলিল তাহারা দ্বিতীয় বাকস ত্বরা
যেইখানা ছিল অতি সুন্দর একটি শিশুতে ভরা।
খুলিয়া দেখিল অতি বৃদ্ধ জীর্ণ সে এক মুখ
দেবতার রোষে চূর্ণ হইলো দেব-দাসেদের বুক।
তৃতীয় বাকসে না যদি থাকে কিছু সুন্দরতম
ভাবিল আজিকে দেবতা হইবে নিশ্চয় নির্মম।


দেব-দাসেদের দেহ থরথর হৃদ-কম্পন বুকে
তৃতীয় বাকস খুলিল তাহারা দেবতার সম্মুখে।
দেখিল সেথায় শুয়ে আছে এক জীর্ণ বৃদ্ধ নারী
কুঁচকানো তার মুখের চামড়া, তবুও মমতা ভারী।
বুকে তার আছে পৌত্র-শিশু নতুন বংশধর
ভীত-সন্ত্রস্ত দাসেরা দেখিয়া কাঁপিতেছে থর থর।
দেবতা হাসিল বাকসের দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে
উদ্ভাস তাঁর খুশী ভরা মুখ যাহা চায় তাহা পেয়ে।
দেবতা দেখে, শুয়ে আছে সেথা বৃদ্ধা এক মাতামহী
অক্ষয় তাঁর ভালোবাসা তবু গিয়াছে সেথায় রহি'।
যে ভালোবাসা পৃথিবীর বুকে রাখিছে জীবনধারা
সুন্দরতম ভালোবাসা দেখে দেবতা পাগলপারা।


** এটি বৌদ্ধ ধর্মের একটি মিথ অবলম্বনে, যেটি আমার বড়মেয়ে টুরিস্ট গাইডের কাছে শুনেছিল তার সাউথ কোরিয়া ভ্রমণের সময় এবং আমাকে এসএমএস করে একটি কবিতা লেখার আবদার জানিয়ে|


রচনা: ৬ মে, ২০১৬