পথ-পাগল এক উদাস পথিক পথেই চলে হেঁটে
ক্ষণিক বিরাম গাছের নীচে দু'চোখ এলে এঁটে।
জেগেই ভাবে এমনি ক’রে সময় গেলে হেলায়
ঝুলি খানি স্বর্ণ কণায় ভরবে সে কোন বেলায়?
আবার নামে পথের টানে, দূরের সে কোন দেশ
যেথায় গেলে ভরবে ঝুলি, চলার হবে শেষ।


পথের পাশে জীবন হাসে হাজার সুর ও ছন্দে
নদীর ঘাটে বধূর হাসি ঢেউ তোলে আনন্দে।
গাঁয়ের পথে হাটের মাঝে, লোকজনে ভরপুর
শান্ত মনে দাঁড়িয়ে শোনে বাউল গানের সুর!
মাটির ছোট্ট কুঠির রাঙে রাঙা বৌয়ের আভায়
প্রাণের প্রিয় ফিরবে সাঁঝে, পায় শিহরণ ভাবায়।
ভিখারিনীর ঝুলির তলায় কয়টি শস্য-কণা
কোলে যে তার ছোট্ট শিশু, বিরাট চন্দ্র-সোনা।
মোয়াজ্জিনে আজান হাকে, মন্দিরে আরতি
ধর্মে কর্মে জীবন পূতঃ, যুগল-গন্ধে রতি।
পথের পাশে গাভীর আদর, বাছুর পরম সুখে
রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি, কি আনন্দ বুকে।
গাছের ডালে পাখির বাসায় কয়টি ছোট্ট ছানা
কিসের টানে মায়ের প্রাণে সুখ আছে কার জানা?
পথিক চলে উদাস নয়ন, কিছুই নাহি দেখে
শত চাওয়ায় জীবন খাতায় শুধুই অভাব লেখে।
ঝুলির ভিতর হাতটি দিয়ে সদায় পরখ করে
এতো স্বর্ণ রাখলো সেখায়, তবু নাহি ভরে!


ক্লান্ত পথিক গাছের নীচে বসলো পথের পাশে
তন্দ্রা চোখে দেখলো ছোট্ট এক সোনামুখ হাসে।
বললো তারে যতই রাখো স্বর্ণ মুঠো মুঠো
ভরবে কেন ঝুলি তোমার, নীচেতে যার ফুটো?
জীবন যাতে ভরতো তোমার সে সব পিছে ফেলে
ঝুলির ভিতর দুঃখ ভ'রে পথের শেষে এলে।
তন্দ্রা ভেঙে পথিক যখন চকিত মনে জাগে
আলোর শেষে আঁধার তখন, সূর্য অস্তরাগে।
হতাশ চোখে উদাস পথিক পিছন ফিরে চায়
স্বর্ণ নেশায় যা হারালো, পাওয়ার সময় নাই।

রচনা: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬