নীলাভ-সাদা রং এর হাত ধরে
সরষে খেতের সরু আল পরে
হেঁটে চলেছি দিগন্তের পথে
যদি দেখা হয় কোনোদিন কোনো সৈকতে।
দ্বীপে-পুঞ্জে, কুঞ্জে কুঞ্জে, গুঞ্জে তোমার নাম
বনলতা সেন। ঝরে পড়া অবিরাম
ঝর্ণার জলের মতো আমার ছুটে চলা
থামা নেই; ছুঁতে হবে তোমায় একবিন্দু, খোলা
হাওয়ার পাখা ঝাপটি নেমেছি মহাকাল পানে;
    তুমি বনলতা সেন সন্ধানে।


সরু মধ্যপথের বুনোঝোপে
নাম না জানা গুল্ম থোপে
মাঠের শুকনো পাতার স্তূপ সরিয়ে পাশে
আলো বঞ্চিত ফ্যাকাসে দূর্বাঘাসে
সযতনে খুঁজে চলি। নিরন্তর ব্যবধানে
সময় হারায়, তবু তোমার টানে
    শতাব্দী মাড়িয়ে যেতে দ্বিধা নেই।


বুনোফুলে, বুনোহাঁসের দলে
পদ্মজলে, কুচুরীপানার আড়ালে
উঁকি দিয়ে যাই। কি জানি কোথায় চুপ-
করে বসে থাকো। শুকনো খালের অবাঞ্চিত স্তূপ,
বিলের শামুক ঝিনুক মাঝে রাখি চোখ;
যদি তোমার দেখা পাই। অপলক
মাঝির পালে, জেলের জালে বিহ্বলে
চেয়ে থাকি। রাজকন্যা তুমি ভুলে
পড়ো যদি ধরা, তবে তোমা নিয়ে স্বর্গে
     দেবো পাড়ি।


কি জানি কি রূপে, কোথা আছো চুপে?
দেহের গন্ধ ভিড়িয়ে তুমি তুলসীপাতা-ধূপে?
নাকি কন্ঠস্বর ছুঁয়ে ঝিঁঝি পোকার কোলাহলে
খর চাহনি মিশিয়ে জোনাকির কোন্দলে
আঁচল উড়ায়ে নদীর কল্লোলে,
কৃষ্ণ কেশের বেণী বুনে পল্ললে পল্ললে
আমাকে ফাঁকি দিতে কোন প্রকৃতিতে সন্নিবেশ
তোমার?


নীলাভ-সাদা রং এর হাত ধরে প্রহর গুনি
কুয়াশাস্নানে মাখামাখিতে শিশির গুনি
কদম ফুলের গন্ধ গুনি ভরা বর্ষাদিনে;
গোধূলির রং গুনি তোমার হাসি চিনে
নিতে ব্যর্থ প্রচেষ্টা যদি ভুলেও সার্থকতা পায়;
কি জানি কি তুমি যদি ডেকে নাও আমায়
ভেবে সুমদ্রের শান শুনি; তোমার অভিমান
ভেবে বাতাসের গান শুনি; চলে অভিযান
ধূমকেতুর দেশ ; কোথায় না কোথায়
অগ্নিসেতুর বেশ তোমার চঞ্চলতা শোভা পায়
    কে জানে?
চলেছি আমি তুমি বনলতা সেন সন্ধানে।


কুহু কোকিলতায় দস্যি মেয়ের টংকারে
এক হয়ে আছো? বেদেনীর নূপুরের ঝংকারে
রেখেছো কি একাত্মবোধ? বাদ রাখিনি শুকনো
পাতার মর্মর শব্দ, তোমার স্বর সান্নিধ্যে এখনো
জল পড়ার শব্দেও রাখি কান ;
টানটান ব্রজপাতের খানখান; পাখির কলতান;
মধ্যাহ্নের ঘর্মাক্ত রাখালের গানে
খুঁজে ফিরি তুমি বনলতা সেন সন্ধানে।


২২ এপ্রিল, ২০২০


(পছন্দের কবিতাগুলোর মধ্যে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের “বনলতা সেন” কবিতাখানি একটি। প্রায়ই অবসর সময়ে পড়ি। আপনা থেকে অনুপমা আড়াল চরিত্র বনলতা সেনের প্রতি টান এসে যায়। সেই টান থেকে খুঁজতে খুঁজতে আমার এ কবিতা লেখা। কবিতাখানি বনলতা সেন চরিত্র রূপায়ণকারী কিংবদন্তি কবির নামেই উৎসর্গীত।)


(কাব্যগ্রন্থ-সম্ভাষণ)