সম্মুখে অপরিচিতা
    স্টেশন পরিচিত, ট্রেন পরিচিত
    চেনা সময়, চেনা গন্তব্য দিনাজপুর।
সম্মুখের এক তরুণীর কেশ অচেনা
    দৃষ্টি অজানা
    তার শিহরিত ভাব অজানা।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে,
    আমার কাছে আমার লজ্জা অজানা।
প্রশ্ন করে বসি, আপনার নাম কি?
সে নিশ্চুপ প্রতিমা।
মাঝেমাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে
    রাত বাড়ে
    সমহারে
আমি তাকিয়ে যৌবনকে সদ্য জয় করা
    অপরিচিতার দিকে।
হয়তো সে কথা বলতে জানে না, তাই সে নিশ্চুপ।


হঠাৎ সে প্রশ্ন করে,আপনি যাবেন কোথা?
আমি নিস্তব্ধ উল্লাসে ফেটে পড়ি
                           শুরু করি
               আমার পরিচয়নামা
               আমার নেই থামা।
সে, শোনে কি শোনে না,
মাথা নাড়ায়, আর কিছু বলে না।
আমি বলি কি মেয়ে, তোমার নাম কি?
সে খানিক ভেবে বলে, ঢাকার মালিবাগে বাসা আমার।
তারপর
        মৃদু হাসি দিয়ে চুপ সে।
আমি তার সেই হাসি বর্ধিত করি
        পাহাড় গড়ি ভাবনার
হয়তো সে কানে কম শোনে।
সে কারুকার্য বিনা অপরূপা কতো
                           তার মতো
        আর নেই বুঝি দুনিয়াজুড়ে।
বাড়াতে কথা, অসভ্যতা, আমি আবার জানতে চাই,
অপরিচিতা তোমার গন্তব্য কোথায়?
দৃষ্টি ভিড়িয়ে খানিক হেলে চুপিসারে বলে
    "আমি একাই যাচ্ছি,
    লুকিয়ে বাসা থেকে চলে এসেছি,
    আজ আমি হারিয়ে যাবো"।


কথা থামলো
ট্রেন থামলো
সে পড়লো নেমে,
আমি মুহূর্তেই ঘেমে
জানা হলো না কিছু,
নেবো কি পিছু?


স্টেশন পাবনা
ট্রেনের জানালা দিয়ে গলা বের করে
     হেঁটে যাওয়া অপরিচিতাকে বলি
     "সাথে নেবে কি আমায়"?
সে গুটি গুটি পায় জানালার কাছে এসে
আবার চুপিসারে বলে,
    "আমার নাম অনামিকা
    যাচ্ছি হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতালে
    বাসার সবাই আমায় পাগল বলে
    তাই গারদে নিজেকে সমর্পণ করতে এসেছি"।


ট্রেন হুইসেল দিয়ে ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে
গলা আমার তখনো অর্ধেক জানলার বাইরে।
    সে স্টেশনে দাঁড়িয়ে
    তার আমার দূরত্ব বাড়ে
    আমার ভাবনা বাড়ে
    তার মুখে হাসি ফোটে
    দূরত্বের সাথে তার হাসির গভীরতা বাড়ে।


২৪ নভেম্বর, ২০২০


(কাব্যগ্রন্থ-সম্ভাষণ)