সেখানে ছিল হাসিখুশি এক আমুদে ফকির  ২০৮
সে একজন অনুমোদিত ফকির কিন্তু রোগা লোক
চারশ্রেণির ফকিরের মধ্যে মত গল্পবাজ চারচোখ
এবং মার্জিত কথকে ছিলনা কেউ তার সমকক্ষ।
সেই ফকির নিজের অর্থ-খরচ ব্যয়ে কয়েক পক্ষ
রমণীলোকের সম্পন্ন করে দিয়েছিল বিবাহ।
তার দেশের লাখেরাজ, অধিপতি, ভূমি বাদশাহ
জোতদার, জমিদার, সিপাহী কোতোয়ালদের কাছে
তার এক বিশেষ পরিচিতি এবং সমর্থন আছে।
সুশীল সম্ভান্ত এই শহরের নারীসমাজের নিকটে
তার কাছে দোষ স্বীকারের স্বীকৃত ক্ষমতা আছে বটে।
নিজে বলেছে, সে একজন যাজকের অধিক ক্ষমতাবান
কারণ গীর্জা পক্ষ তাকে করেছে অনুমতিনামা প্রদান।
খুব মনোযোগের সাথে সে, দোষ স্বীকারোক্তি শোনে
আত্মসমর্পণ পাপস্খলনের সুখকর সহজ পরিক্রমা বোনে
যেখানে বুঝতে পারতো পাবে ভালো উপহার প্রতিদান,
সেখানে সে পাপমোচনের জন্য দিতো সহজ বিধান।
একজন অসহায় গরীব ফকিরের কাছে উপহার বণ্টন
করা- খুব ভালোভাবে পাপ প্রায়শ্চিত্ত হওয়ার ই লক্ষণ।
সে দৃঢ় ভাবে করে জাহির, যেই লোক করে দয়া দান
সেই লোক জানে সে অনুতপ্ত এবং পায় সে পরিত্রাণ।
এমনও লোক আছে যাদের হৃদয় খুব শক্ত কঠিন
অনুতপ্ত হওয়া সত্ত্বেও কাঁদতে পারে না কোনোদিন;
কাজে, অযথা কান্নাকাটি আর প্রার্থনায় সময় নষ্ট না করে
পাপ প্রায়শ্চিত্তে কিছু অর্থ, গরীব দুখীকে দিতে পারে।


সুন্দরী রমণীদেরকে ছুরি পিন দেওয়ার ইচ্ছে তাগিদে
তার আলখল্লায় ছুরি পিন সর্বদা রাখতো সে মজুদে।
এবং তার গলার কণ্ঠস্বরও ছিল প্রফুল্ল আমুদে ঠাসা
সে গান গাইতে, বেহেলা বাজাতেও ছিল বড্ড খাসা।
পালাগান সঙ্গীতে সে ফকির পেয়েছিল পুরস্কার,
লিলি ফুলের মত ধবধবে সাদা ছিল তার ঘাড়।
কিন্তু ছিল এক মল্লযোদ্ধার মত শক্তিশালী পরিপোক্ত
প্রত্যেক শহরবাসী তাকে খুব ভাল করেই চিনতো।২৪০


কুষ্ঠরোগী বা মহিলা ভিখারিদের থেকে অধিক নজর
থাকতো সরাইখানার মালিক, পরিচারিকাদের উপর।
কারণ সে মনে করে তার মতো যোগ্যলোকের পক্ষে
তার সম্মানের অবস্থানের কারণ এবং হেতু সমকক্ষে
কুষ্ঠরোগীদের সাথে চলাফেরা মানায় না কোনমতে
এটা খুব অসম্মানজনক, লজ্জাকর এবং তাদের সাথে
কারবার করলে উন্নতি লাভের মুখ দেখা হবে দায়,
বরং ধনীলোক, বিক্রেতাদের সাথে উঠবস করা চাই।
সর্বোপরি যেখানে পেত সে লাভের বিন্দু গন্ধমাত্রক
সেখানে সাজত বিনীত অমায়িক নম্র আর সহায়ক। ২৫০


তার মত দক্ষ ভিক্ষুক ছিল না কোনো অঞ্চলে
সে ছিল দক্ষ বেজায় শহরের সব ভিক্ষুকের দলে।
তার অর্থের মোটা অনুদান দিত সহকর্মীদের সন্নিকটে
তার সীমানায় পা দিতে সহকর্মীরা সাহস পেতনা মোটে।
যে বিধবা নারীটিরও একপাটি জুতো কেনার মুরদ নেই
বিধবা সেই নারীটিও ভিক্ষুকের কথাবার্তাতে মুগ্ধ হয়েই-
বিদায়ের আগে একটা পয়সা হলেও করত দান,
তার মোট লাভ তার নিয়মিত আয়ের কয়েকগুণ সমান।
পুতুলের মত করে জানতো সে নাচার ফিকির
বড় বড় লোকদের সাথে ছিল তার পরিচয় খাতির।
সে নিভৃত পথবিশিষ্ট জরাজীর্ণ সন্ন্যাসীর মত নয়,
ঢিলেঢালা পোশাকে নিম্ন ফকিরের মতো করে নয়,
সে যেতো পোপের মতো প্রভুর মতো বেশ ধরে-
দামী ভালো জাঁকজমক খাটো কোট পরিধান করে।
জামা পরিচ্ছন্ন সদ্য ইস্ত্রী করে আনা বলা চলে
কথার মাঝে ইচ্ছে করে দু একটা ইংরেজি শব্দ বলে
যেন ইংরেজিটা তার স্বরে মিষ্টি হয়ে ঝরে
গানের শেষে ফকির যখন বীণা বাজাতে ধরে
তখন তার চোখ উজ্জ্বল দুটো তার মাথার তলে
কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের মিটিমিটি তারাদের মতোই জ্বলে
এই সার্থক অনুমোদিতের পরিচয় হিউবার্ট ফকির।
তীর্থদলে এক বণিকের দাড়ির মাঝ বরাবর ছিল চিড়। ২৭০


চলবে...


(অতিশীঘ্র বণিকের পরিচয় দেওয়া হবে)