অশ্ব, নবদূর্ব্বাময় দেশে,
               বিহরে একেলা অধিপতি।
নিত্য নিশা অবশেষে
               শিশিরে সরস দূর্ব্বা অতি।
বড়ই সুন্দর স্থল,
               অদূরে নির্ঝরে জল,
তরু, লতা, ফল, ফুল,
               বন-বীণা অলিকুল;
মধ্যাহ্নে আসেন ছায়া,
               পরম শীতল কায়া,
পবন ব্যজন ধরে,
                পত্র যত নৃত্য করে,
মহানন্দে অশ্বের বসতি॥



কিছু দিনে উজ্জ্বলনয়ন,
কুরঙ্গ সহসা আসি দিল দরশন।
বিস্ময়ে চৌদিকে চায়,
                যা দেখে বাগানে তায়,
কতক্ষণে হেরি অশ্বে কহে মনে মনে;—
“হেন রাজ্যে এক প্রজা এ দুখ না সহে!
তোমার প্রসাদ চাই,
                শুন হে বন-গোঁসাই,
অাপদে, বিপদে দেব, পদে দিও ঠাঁই॥”



এক পার্শ্ব করি অধিকার,
             আরম্ভিল কুরঙ্গ বিহার;
খাইল অনেক ঘাস,
             কে গণিতে পারে গ্রাস?
অাহার করণান্তরে  
             করিল পান নির্ঝরে;
পরে মৃগ তরুতলে  
             নিদ্রা গেল কুতূহলে—
গৃহে গৃহস্বামী যথা বলী স্বত্ববলে॥



বাক্যহীন ক্রোধে অশ্ব, নিরখি এ লীলা,
ভোজবাজি কিম্বা স্বপ্ন! নয়ন মুদিলা;
উন্মীলি ক্ষণেক পরে কুরঙ্গে দেখিলা,
রঙ্গে শুয়ে তরুতলে;
                দ্বিগুণ অাগুন হৃদে জ্বলে;
তীক্ষ্ণ ক্ষুর আঘাতনে ধরণী ফাটিল,
ভীম হ্রেষা গগনে উঠিল।
প্রতিধ্বনি চৌদিকে জাগিল॥



নিদ্রাভঙ্গে মৃগবর
             কহিলা, “ওরে বর্ব্বর!
কে তুই, কত বা বল?
সৎ পড়সীর মত
            না থাকিবি, হবি হত।''
কুরঙ্গের উজ্জ্বল নয়ন
            ভাতিল সরোষে যেন দুইটি তপন।।



হয়ের হৃদয়ে হৈল ভয়,
            ভাবে এ সামান্য পশু নয়,
শিরে শৃঙ্গ শাখাময়!
প্রতি শৃঙ্গ শূলের আকার
বুঝি বা শূলের তুল্য ধার,
কে আমারে দিবে পরিচয়?



মাঠের নিকটে এক মৃগয়ী থাকিত,
অশ্ব তারে বিশেষ চিনিত।
ধরিতে এ অশ্ববরে,
           নানা ফাঁস নিরন্তরে।
মৃগয়ী পাতিত।
কিন্তু সৌভাগ্যের বলে, তুরঙ্গম মায়া-ছলে
কভু না পড়িত॥



কহিল তুরঙ্গ;—“পশু উচ্চশৃঙ্গধারী—
মোর রাজ্য এবে অধিকারী;
না চাহিল অনুমতি,
              কর্কশভাষী সে অতি;
হও হে সহায় মোর,
             মারি দুই জনে চোর॥''



মৃগয়ী করিয়া প্রতারণা,
           কহিলা,“হা! এ কি বিড়ম্বনা!
জানি সে পশুরে আমি,
          বনে পশুকুলে স্বামী,
শার্দ্দূলে, সিংহেরে নাশে,
         দগ্ধে বন বিষশ্বাসে;
একমাত্র কেবল উপায়;—
মুখস ও মুখে পর,
        পৃষ্ঠে চর্ম্মাসন ধর,
আমি সে আসনে বসি,
        করে ধনুর্ব্বাণ অসি,
তা হলে বিজয় লভা যায়॥”


১০


হায়! ক্রোধে অন্ধ অশ্ব, কুছলে ভুলিল;
লাফে পৃষ্ঠে দুষ্ট সাদী অমনি চড়িল।
লোহার কণ্টকে গড়া অস্ত্র, বাঁধা পাদুকায়,
তাহার আঘাতে প্রাণ যায়।
মুখস নাশিল গতি, ভয়ে হয় ক্ষিপ্তমতি,
চলে সাদী যে দিকে চালায়॥


১১


কোথা অরি, কোথা বন,
             সে সুখের নিকেতন?
দিনান্তে হইলা বন্দী আঁধার-শালায়।
পরের অনিষ্ট হেতু ব্যগ্র যে দুর্ম্মতি,
এই পুরস্কার তার কহেন ভারতী;
ছায়া সম জয় যায় ধর্ম্মের সংহতি॥