(১)


          শুনেছি মলয় গিরি তোমার আলয়—
                    মলয় পবন!
বিহঙ্গিনীগণ তথা                গায়ে বিদ্যাধরী যথা,
          সঙ্গীত সুধায় পূরে নন্দনকানন; কুসুমকুলকামিনী,            কোমলা কমলা জিনি,
          সেবে তোমা, রতি যথা সেবেন মদন!


(২)


          হায়, কেনে ব্রজে আজি ভ্ৰমিছ হে তুমি—
                     মন্দ সমীরণ?
যাও সরসীর কোলে,          দোলাও মৃদু হিল্লোলে
          সুপ্রফুল্ল নলিনীরে—প্রেমানন্দ মন!
ব্ৰজ-প্রভাকর যিনি        ব্ৰজ আজি ত্যজি তিনি,
          বিরাজেন অস্তাচলে—নন্দের নন্দন!


(৩)


          সৌরভ রতন দানে তুষিবে তোমারে
                    আদরে নলিনী;
তব তুল্য উপহার          কি আজি আছে রাধার?
          নয়ন আসারে, দেব, ভাসে সে দুঃখিনী!
যাও যথা পিকবধূ—            বরিষে সঙ্গীত-মধু,—
          এ নিকুঞ্জে কাঁদে আজি রাধা বিরহিণী।


(৪)


          তবে যদি, সুভগ, এ অভাগীর দুঃখে
                    দুঃখী তুমি মনে,
যাও আশু, আশুগতি,          যথা ব্ৰজকুলপতি—
          যাও যথা পাবে, দেব, ব্রজের রতনে!
রাখার রোদনধ্বনি                বহ যথা শ্যামমণি—
          কহ তাঁরে মরে রাধা শ্যামের বিহনে!


(৫)


          যাও চলি, মহাবলি, যথা বনমালী–
                    রাধিকা-বাসন;
তুঙ্গ শৃঙ্গ দুষ্টমতি,                রোধে যদি তব গতি,
          মোর অনুরোধে তারে ভেঙো, প্রভঞ্জন!
তরুরাজ যুদ্ধ আশে,        তোমারে যদি সম্ভাষে--
          ব্রজাঘাতে যেও তায় করিয়া দলন!


(৬)


          দেখি তোমা পীরিতের ফাঁদ পাতে যদি
                    নদী রূপবতী;
মজো না বিভ্রমে তার,           তুমি হে দূত রাধার,
          হেরো না, হেরো না দেব কুসুম যুবতী!
কিনিতে তোমার মন,            দিবে সে সৌরভধন,
          অবহেলি সে ছলনা, যেয়ো আশুগতি!


(৭)


          শিশিরের নীরে ভাবি অশ্রুবারিধারা,
                    ভুলো না, পবন!
কোকিলা শাখা উপরে,        ডাকে যদি পঞ্চস্বরে,
          মোর কিরে---শীঘ্র করে ছেড়ো সে কানন!
স্মরি রাধিকার দুঃখ,             হইও সুখে বিমুখ—
          মহৎ যে পরদুঃখে দুঃখী সে সুজন!


(৮)


          উতরিবে যবে যথা রাধিকারমণ,
                    মোর দূত হয়ে,
কহিও গোকুল কাঁদে         হারাইয়া শ্যামচাঁদে---
          রাধার রোদনধ্বনি দিও তাঁরে লয়ে;
আর কথা আমি নারী       শরমে কহিতে নারি,---
          মধু কহে, ব্রজাঙ্গনে, আমি দিব কয়ে।



(ব্রজাঙ্গনা কাব্য)