ময়ুর কহিল কাঁদি গেীরীর চরণে,
         কৈলাস-ভবনে;—
        “অবধান কর দেবি,
         আমি ভৃত্য নিত্য সেবি
প্রিয়োত্তম সুতে তব এ পৃষ্ঠ-আসনে।
         রথী যথা দ্রুত রথে,
         চলেন পবন-পথে
দাসের এ পিঠে চড়ি সেনানী সুমতি;
তবু, মা গো, আমি দুখী অতি!
        করি যদি কেকাধ্বনি,
        ঘৃণায় হাসে অমনি
খেচর, ভূচর জন্তু;—মরি, মা, শরমে!
        ডালে মূঢ় পিক যবে
        গায় গীত, তার রবে
মাতিয়া জগৎ-জন বাখানে অধমে!
        বিবিধ কুসুম কেশে,
        সাজি মনোহর বেশে,
বরেন বসুধা দেবী যবে ঋতুবরে
কোকিল মঙ্গল-ধ্বনি করে।
অহরহ কুহুধ্বনি বাজে বনস্থলে;
নীরবে থাকি, মা, আমি; রাগে হিয়া জ্বলে!
       ঘুচাও কলঙ্ক শুভঙ্করি,
পুত্রের কিঙ্কর আমি এ মিনতি করি,
       পা দুখানি ধরি।”
উত্তর করিলা গৌরী সুমধুর স্বরে;—
“পুত্রের বাহন তুমি খ্যাত চরাচরে,
       এ আক্ষেপ কর কি কারণে?
হে বিহঙ্গ, অঙ্গ-কান্তি ভাবি দেখ মনে!
   চন্দ্রককলাপে দেখ নিজ পুচ্ছ-দেশে;
   রাখাল রাজার সম চূড়াখানি কেশে!
   আখণ্ডল-ধনুর বরণে
মণ্ডিলা সু-পুচ্ছ ধাতা তোমার সৃজনে!
      সদা জ্বলে তব গলে
      স্বর্ণহার ঝল ঝলে,
যাও, বাছা, নাচ গিয়া ঘনের গর্জ্জনে,
      হরষে সু-পুচ্ছ খুলি
      শিরে স্বর্ণ-চূড়া তুলি;
      করগে কেলি ব্রজ-কুঞ্জ-বনে।
      করতালি ব্রজাঙ্গনা
      দেবে রঙ্গে বরাঙ্গনা—
তোষ গিয়া ময়ূরীরে,প্রেম-আলিঙ্গনে!
      শুন বাছা, মোর কথা শুন,
      দিয়াছেন কোন কোন গুণ,
দেব সনাতন প্রতি-জনে;
     সু-কলে কোকিল গায়,
     বাজ বজ্র-গতি ধায়,
অপরূপ রূপ তব, খেদ কি কারণে?”—
    নিজ অবস্থায় সদা স্থির যার মন,
    তার হতে সুখীতর অন্য কোন্ জন?