শঙ্খনাদ করি মশা সিংহে আক্রমিল;
           ভব-তলে যত নর,
           ত্রিদিবে যত অমর,
           আর যত চরাচর,
হেরিতে অদ্ভুত যুদ্ধ দৌড়িয়া আইল।
হুল-রূপ শূলে বীর, সিংহেরে বিঁধিল।
            অধীর ব্যথায় হরি,
            উচ্চ-পুচ্ছে ক্রোধ করি,
            কহিলা;—“কে তুই, কেন
            বৈরিভাব তোর হেন?
        গুপ্তভাবে কি জন্য লড়াই?—
সম্মুখ-সমর কর্‌; তাই অামি চাই।
          দেখিব বীরত্ব কত দূর,
          আঘাতে করিব দর্প-চূর;
          লক্ষ্মণের মুখে কালি
          ইন্দ্রজিতে জয়-ডালি,
          দিয়াছে এ দেশে কবি।”
কহে মশা;—“ভীরু, মহাপাপি,
যদি বল থাকে, বিষম-প্রতাপি,
          অন্যায়-ন্যায়-ভাবে,
ক্ষুধায় যা পায়, খাবে;
          ধিক্‌, দুষ্টমতি!
মারি তোরে বন-জীবে দিব, রে, কু-মতি।''
     হইল বিষম রণ, তুলনা না মিলে;
          ভীম দুর্য্যোধনে,
          ঘোর গদা-রণে,
          হ্রদ দ্বৈপায়নে,
তীরস্থ সে রণ-ছায়া পড়িল সলিলে;
ডরাইয়া জল-জীবী জল-জন্তুচয়ে,
    সভয়ে মনেতে ভাবিল,
প্রলয়ে বুঝি এ বীরেন্দ্র-দ্বয় এ সৃষ্টি নাশিল!
          মেঘনাদ মেঘের পিছনে,
          অদৃশ্য অাঘাতে যথা রণে;
          কেহ তারে মারিতে না পায়,
ভয়ঙ্কর স্বপ্নসম অাসে,—এসে যায়,
জর-জরি শ্রীরামের কটক লঙ্কায়।
          কভু নাকে, কভু কাণে,
          ত্রিশূল-সদৃশ হানে
          হুল, মশা বীর।
          না হেরি অরিরে হরি,
          মুহুর্মুহুঃ নাদ করি,
          হইলা অধীর।
হায়! ক্রোধে হৃদয় ফাটিল;—
গত-জীব মৃগরাজ ভূতলে পড়িল!
ক্ষুদ্র শত্রু ভাবি লোক অবহেলে যারে,
বহুবিধ সঙ্কটে সে ফেলাইতে পারে;—
এই উপদেশ কবি দিলা অলঙ্কারে।