আমি তখন অনেক ছোট,
আব্বু বলতো, কিরে বাইরে যাচ্ছিস?
রাতের আগে যেন ঘরে দেখি,
আর মা বলতো ফিরতে দেরী হলে কিন্তু.....
শোলার ঝাড়ু দিয়ে পিটাব।
আমি মনে মনে রাগতাম আর ভাবতাম,
আজ ছোট বলে......
ভাইয়ারা তো কত দেরি করে ফিরে,
শুধু আমি দেরি করলেই দোষ!
তারপর যখন একটু বড় হলাম
আমার জন্য সময় হল রাত দশ টা
এর একটু এদিক ওদিক করলে হাজার কোটি প্রশ্ন!
রাগতাম তবে জবাব দিতাম না!
মা রাগ করে আর কথা বলতো না।
বিরক্ত লাগত, পাশের বাড়ির অমুক সমুক সবাই
কত রাত করে না বাড়ী ফিরে,
কই ওদের তো এত বকা শুনতে হয়না।
তারপর নিজের ভেতরে একটা আক্ষেপ জমিয়ে রাখতাম,
কতটা বিরক্ত করছে মা বাবা!
কিন্ত সময়.....
কিন্তু এক সময়, সময়টা কেমন যেন হয়ে গেল।
বিরক্তির ধরণটাও পাল্টে গেছে
এক বিরক্ত লাগে রাত এত হয়ে গেছে,
কই মা এখনো ডাকছেনা কেন?
মায়ের মোবাইলের রিং পাচ্ছি না কেন?
মা আমার জন্য কি এখন আর অপেক্ষা করে না?
বসে থাকে না দরজা ধরে? বলে না, খোকা তুই কবে আসবি?
আমার জন্য ভাত সামনে নিয়ে বাবা কি আর অপেক্ষা করে না?
বাবার ভয়ে এখন তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরতে হয় না,
আস্তে আস্তে সব হারিয়ে ফেলছি......
এখন আমার ইচ্ছে হয়,
তবে যদি পারতাম ফিরে যেতে ছোট বেলায়!
কত মজা না হতো।
বার বার মোবাইলের দিকে থাকাই কেউ ফোন দেয় না,
কেউ আমাকে দেরি করাতে বকা দেয় না,
কেউ এখন আমার জন্য অপেক্ষাও করে না।
নিজেকে কতটা অসহায় মনে হয়,
তা কেউ বুঝার মত আমার পাশে নেই।
ইচ্ছে হয় শুধু ধরাবাঁধার জীবনে ফিরে যেতে,
তাও পারিনা,পৃথিবী কতটা পাল্টে গেলে আমার জন্য।
আর এখন আমি নিজেও একজন বাবা!
ভয় করে আমার ছেলেটা কোথাও গেলে।
ওর ফিরতে একটু দেরি হলে মনটা ছটফট করে,
কিরে হলো....?
আমার খোকা এখনো এলো না যে?
তার কোন সমস্যা হয়নি তো!
ঘরে বাইরে ছেলেটা থাকলে কত না চিন্তায় মাথা ঘুরে।
কেমন আছে, কোথায় আছে আমার খোকা!
ঠিক মত খেয়েছে তো?
ওর রাতে ফিরতে দেরী হলে আমার চোখে ঘুম আসে না।
সারাক্ষণ শুধু তাদের কথা ভাবি,
আর এইদিকে অফিসের ব্যস্ততা সব তো মাথার উপুড় দিয়ে যায়।
তারপর একটু সময় পেলে ছেলেমেয়েদের খোঁজ নেয়া শুরু করি,
ছেলেটা আমার বড্ডো বোকা,সেও দেখি আমার উপর বিরক্ত!
হয়ত ভয়ে বলে না,তবে মনের মধ্যে বলাবলি করে
বাবা কতই না বিরক্ত করছিস,আমি কি ছোট!
আর আমার জন্য, তোরাই তো আমার সব।
এক সময় হয়ত আমার বাবাও আমার জন্য এমন করত!
ভুল বুঝেছিলাম তবে আজ......
বুঝি বাবা কাকেই বলে।
মুখের সামনে ছেলেটাকে বকা দিলেও
পরে তার জন্য লুকিয়ে কাঁদতে হয়।
একসময় হয়ত আমি তোদের পাশে থাকবো না,
আর যখন বাবা হবি বুঝবি কেন এতই বিরক্ত করছি তোদের,
তখন হয়ত চাইলে ও কাছে পাবি না,ঠিক আমার মতন।
ভাল থাকিস বাবা, যেখানে থাকিস,সুখে থাকিস।