১৯৪৭ সাল ভারত ভাঙ্গলো
স্বাধীন হল পাকিস্তান
বাংলার মানুষের মনেও শান্তি
হাতছানি দেয় নিপীড়নহীন নতুন সকাল
কৃষক বধুর স্বপ্নে
থালা ভরা পান্তার পানিতে
কৃষক সন্তানের ফোকলা দাতের হাসি
আল্পনা আকে
এ রাতেও কিছু চোখে ঘুম নেই
শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, মুজিবরা হিসেব করে
এদেশ কি পাবে তার ন্যায্য অধিকার।।


দিন যায়, রাত যায়, মাস পেরিয়ে বছর আসে
বাঙ্গালির হাহুতাসে ভরে ওঠে বাংলার আকাশ
ভাত আছে, মাছ আছে
সোনালী পাটের আশটে গন্ধে
অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন কৃষকের বুকে
কারেন্ট জালে বাঙালির স্বপ্ন
সেচে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হায়েনা, হাঙ্গর।।


এও বলে, "তুম উর্দু বুলো,  বাঙলা মে কেয়া হ্যায়?
উর্দু সাচ্চা হ্যায়,
Urdu and only Urdu will be the state language if Bangladesh."
না,না,না। মানবো না, মানছি না
মুজিব, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী,  ভাসানীরা ঘুমায় না
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার তারাও চেচিয়ে ওঠে
মোদের দাবি, মোদের দাবি
মানতে হবে,  মানতে হবে
বাঙলা চাই, বাঙলা চাই
রাষ্টভাষা বাংলা চাই।
বালতি বালতি বুকের তাজা রক্তে
অতপর অঙ্কুরিত হয়
বাঙলা ভাষার বীজ।
মায়ের হাতের বানানো পিঠা
বাঙলায় বলতে দারুন মিঠা।।


তবুও শান্তি নেই বেশ কিছু চোখে
মুজিব, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী,  ভাসানীরা ঘুমায় না
বারবার গর্জে ওঠে কিছু কণ্ঠ
ইস্কান্দার মির্জা, " ইস এলাকাকো ওয়েস্ট বেঙ্গল ছে ওয়েস্ট পাকিস্তান বানাদো।"
ভাসানী, " এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করলে,  আসসালামোয়ালাইকুম জানাতে বাধ্য হব।"
আইয়ুব খান বললো," বাঙলা ছে সব মাল লে আও।"
বঙ্গবন্ধু ছয় দফায় বজ্রনাদে জানিয়ে দিলেন,
তা হবার নয়, বাঙলা স্বায়ত্তশাসন চায়, এদেশের অর্থ এদেশেই থাকবে।।


৪৬৮২ দিন কত বছর হয় জানো
প্রায় তের বছর
মশার কামড়ে, শক্ত ফ্লোরে
নির্ঘূম রাত্রি কাটায় বিশ্ববরেণ্য নেতা
তবুও বাঙালির সুখ আনতে হবে।
ছোট্ট রাসেলের কথা মনে হলে
হৃদয়ের গভীরে তন্ন তন্ন করে খুজতে হয়
টুকটুকে মুখখানি
হায়, কতদিন দেখিনি তোমায়।
তবুও সে হৃদয় হার মানে না
স্বপ্ন দেখে অবিরাম,
"বাঙলার মানুষ খেলবে, বাঙলার মানুষ হাসবে
বাঙলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে
এই আমার স্বপ্ন, এই আমার জীবনের কামনা।"
না, পূর্ব পাকিস্তান নয়
এ আমার সোনার বাংলা
এ আমার বাংলাদেশ।।


দিনে দিনে ব্যবধান বাড়ে পশ্চিমে আর পূর্বে
নিষ্ঠুরতার থাবা প্রশস্ত হয় দখলদার হায়েনার
এদেশের মানুষের আর্তনাদ আর আহাজারিতে
আকাশ, বাতাস কেপে কেপে ওঠে
বঙ্গবন্ধু ঘুমায় না
চোখের নিচে কালি পড়েছে
তাজউদ্দিন, ভাসানী, কামারুজ্জামানরা
ক্লান্তি ঢাকতে বড় ফ্রেমের চশমা পড়ে
বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা করে,
" আমাদের তোমরা দাবায় রাখতে পারবা না
রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব
তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
জয় বাংলা।।"


সেই বন্ধুর আজ ১০০ তম জন্মদিন
আমরা পটকা ফুটাই
আমরা আলোকসজ্জা করি
রোজা রাখি
কিন্তু শোন বন্ধু তোমাকে কানে কানে একটা কথা বলি
আমরা কেউ দেশকে ভালোবাসিনা
আমরা কেউ আসলে তোমাকেই ভালোবাসিনা।
মুখে শত বুলি অন্তর পাপে ভরা
বথায় কথায় তোমার আদর্শের ফুলঝুড়ি ছোটাই
রাতে ঠিকই ক্যাসিনো চালাই
পাপিয়ার প্ল্যালেসে আমার নিত্য আনাগোনা
দিনে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর স্লোগান দেই
সন্ধা হলে ভিসির কাছে ঠিকই টেন্ডারের ভাগ চাই।।


নারকেল গাছ ৬ লাখ
বালিশ তুলতে ৬০ হাজার
জানালার পর্দাও লাখের কম না
তাই আমি বলি,
হাম বাঙালি নেই হ্যায়, হাম আইয়ুব, ইয়াহিয়াকি উত্তরসুরী হ্যায়, হাম নালায়েক হ্যায়।


শুনেছি মহামারীর সময় নাকি দোয়া কবুল হয়
করোনার প্রকপে,  মুজিব বর্ষে প্রার্থনা
ইয়া প্রভু
তুমি মোদের বাঙালি বানাও
সত্যি মুজিব প্রেমি বানাও
চোর,  চোরঠামি বাদ দিয়ে
ভাল মানুষ হওয়ার প্রেরণা যোগাও।


কুলি বানাও, মজুর বানাও
পরিশ্রমি, সৎ আমলা বানাও
দেশের খাটি কামলা বানাও।


সুদ খোর বানাইয়ো না
ঘুষখোর বানাইয়ো না
পাপিয়ার পাপের ভাগি বানাইয়ো না
বালিশ চোর, টেন্ডারবাজ বানাইয়ো না
লাখ টাকার নারকেল গাছের পাইকার বানাইয়োনা
কাজ কম,  কথা বেশি আলেম বানাইয়ো না
পরের দুঃখে ব্যথিত না হওয়া
জালেম বানাইয়ো না।
মুজিবের মত সৎ বানাইয়ো
সাহসী আর দেশপ্রেমিক বানাইয়ো
পরের কল্যানে আত্মনিয়োগকারী
বাঙালি বানাও।।।