পটভূমিঃ-


আমার আজকের কবিতা বাংলা আর বাংলা ভাষা নিয়েই; কিন্তু আঙ্গিকটা একটু ভিন্ন। ১৯৫২- সালের ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় জয়; বাংলা ভাষাকে শুধু মর্যাদাই প্রদান করেনি সাথে তাকে এক আন্তর্জাতিক ভাষা রূপেও সমগ্র বিশ্বে এক অনন্য স্বীকৃতি দান করেছে। কিন্তু মাতৃ ভাষা বাংলা নিয়ে যে আন্দোলন, সেই মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলে, কাঁদে, হাসে, গান করে; কিন্তু একটু অন্য রূপে, অন্য ছন্দে; এমনই সব মানুষদের, তাঁদের প্রচলিত স্থানীয় ভঙ্গীতে বাংলা ভাষায় কথা বলা; তাঁদের জীবনের সুখ, দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া, আশা-নিরাশার মর্মস্পর্শী এক অদৃশ্য চিত্র আমি এ কবিতার মাধ্যমে আঁকতে চলেছি। শুধু একটা কথা মনে রাখবেন ওঁরাও বাংলা ভাষাতেই কথা বলে; ওঁরাও আমাদেরই দেশ মাতৃকার সরল সন্তান।


**************************************************


চিত্রপট -১
(সরল গ্রামবাসীদের প্রাক-বসন্ত উৎসবের আয়োজন ও তাঁদের কিছু মনের চেপে রাখা অব্যক্ত ইচ্ছার জলছবি)---


ও ও ও... রবি ঠাকুর রে সামনের ফাগুয়ায় তুকে গেরামে আসতে হবেক!
ও ও ও... রবি ঠাকুর তুই তো শুনেছই বড় ভালমানুস বটে।
কবিতা লিখিস, গান লিখিস; কোঁত ভালো ভালো কথা,
তবেঁ লিখিসনা কেনে দুকলম আমাদেরই গাঁথা?!
ও ও ও... রবি ঠাকুর বোল না কেনে লিখিস লাই তুঁ আমাদের কথা।
এ ফাগুয়ায় রবি ঠাকুর তোকে বুরুংডিতে লিয়ে যাবক,
আমার কইন্যা তিতলি তুঁর জন্য একটা লাল ফুলের
মালা গেঁথে রেখেছেরে, তুঁকে দিবেক বলে।
ও ও ও... রবি ঠাকুর তুঁকে মহুয়া ফুলের মাতাল রস খায়াব'রে...
তুঁকে বসতে দিবো তিতলির কোঁরা শান্ত শীতল পাটিতে। তুই আসবিক কেনে...?
মুই কথা'দে এই ফাগুয়ায় তুঁই আসবিক কেনে...?
ও ও ও... রবি ঠাকুর তুঁকে মোদের দাদা, নানাদের লিখা কুবিতা, কথকতা শুনাব;
চাঁদনী রাতে ধামসা মাদলের তালে তালে, তুঁকে
বুরুংডির গান শুনাব, লাচ দেখাব।
ও ও ও রবি ঠাকুর তুঁকে এই ফাগুয়ায় মোর গেরামে আসতেই হবেক!!!


চিত্রপট-২


(সেই বসন্তে বুরুংডি গ্রামে গ্রাম্য দেবীর দয়া হয়, আর মায়ের দয়ায় সমগ্র গ্রাম মারক বসন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শ্মশান হয়ে যায়। বসন্ত রোগের তীব্র যন্ত্রণায় বুরুনের ছোট্ট মেয়ে তিতলি রোগ শয্যায় বেহুঁশ, ভুল বকে; তখন বুরুনের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা, একটাই নাম তিতলি তিতলি তিতলি...!!!)---


বাঁচাও বাঁচাও বাচাও... মুর তিতলিকে বাঁচাও গো ডাক্তার ঠাকুর;
ওঁকে আপনি সারাইয়ে তোলেন গো ঠাকুর।
উহা যে কুঁথা দিয়েছে; এই ফাগুয়ায় পূর্ণিমা রাতে বুরুংডির মাঠে, ও লাল শাড়ি পড়ে লাল ফুলের মালা গলায় পরে লাচবে গাইবে পরব পালবে গো?
ও ও ও... ডাক্তার বাবু মুর তিতলিরে সারাইয়া দেন কেনে!


ও ও ও... রবি ঠাকুর তুমি এই ফাগুয়ায় আসক লাই,
তুমি শহুরে বাবুদের জন্য ইবারের মতন বড় বড় পদ্য লিখ গান লিখ...
মুরা বেঁচে থাকলে সামনের ফাগুয়ায় তুমাকে ডেকে লিব গো!


বি দ্রঃ- কবিতাটি একটি ক্ষয় প্রাপ্ত, বিলোপের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো মানুষদের নিয়ে লেখা, তাঁদের গ্রাম্য কথ্য ভাষার টানটা রাখার চেষ্টা করবেন! ধন্যবাদ


বিষয়ঃ- "বাংলা আমার ভাষা"