মূমুর্ষ পিতা কহে দুই পুত্রকে ডেকে,
''জনম দু:খী মাকে তোদের গেলাম ধরায় রেখে।
পিষ্ট পীড়ায় সারা জীবন ছিলাম বিছানাতে
দুই বিঘে ফসলি ভুঁই ছিল মোটে হাতে।
তিন কণ্যা পাত্রস্ত্য আর তোদের অন্ন রুটি
সব আয়ুষ্কাল দিল যোগাড়ে আমি নিতাম ছুটি।
আজ আমার বিদায় ক্ষণে এই মিনতি রাখি
বউ বাচ্চার সুখ সৌরভে মাকে দিওনা ফাঁকি।
দু' বেলা দু' মুঠো দিও ক্ষুধা পেলে তাঁর
মাতৃসেবা বিনে জানিও জগতে সবি অসাড়।
সমান ভাগে ভাগ করিও জমি-পুকুর-বাড়ী
ভগ্নিগনেরে দিও কিছু অল্প বিস্তর তারি।
জননী তোমার হইলে গত রেখ আমার পাশে
মাটি গৃহে চাপা দিয়ে কলা পাতা আর বাঁশে।"
আরজ আর্জি শেষ করিয়া পিতৃ মহাশয়
প্রাণ পাখি বিদায় দিয়ে চক্ষু মুদে রয়।
বছর খানা না পেরুতেই ছোট পুত্রধনে
অগ্রজকে ডেকে বলে,‌''সুখ নাহি মোর মনে।
জমি জমা ভাগ করে দাও খাব ভিন্ন পাকে
মাসের আধেক তুমি আমি খেতে দেব মাকে।
অতি বড় সংসার তোমার ছেলে পুলে ভরা
এক সাথে থাকতে গেলে না কাটিবে খড়া।
আমরা কেবল দুটি মানব চারটি মোটে পা
আধা পেটে না বাড়িবে উঠন্ত বউর ঘা।"
শুনে হেসে বলে বড়,"আসুক সামনের মাঘ
শর্ষে কাটা পড়ে হবে জায়গা জমি ভাগ।
আমার মত ভাগ করিব নেবা তুমি চেয়ে
মোটা তাজা হতে পার যেন দুই জনে খেয়ে।"
অগ্রজ গভীর রাতে বিলাপ করে অশ্রু নিয়ে চোখে,
''হায় বগবান ভাইটি আমার রইল না আর বুকে।
পঁচিশ বছর জোড়ায় ছিলাম যমজ কলার ন্যায়
আজকে সে শিখেছে হিসেব লাভ,ক্ষতি আর ব্যয়।
মাকে আমার করতে হবে দুই ঘর ছুটাছুটি
কারো গৃহে আলু ভর্তা-ডাল, কারো গৃহে পুটি।
কেউ যদি দেয় দু'মুঠো খেতে দুই বেলা
পান্তা-পানি জুটবে কিছু, নয় আধা উপোস খেলা।
ভাগাভাগির গৃহে মায়ের জুটেনাতো ভাত
দিনের বেলা এক আধ পেটা উপোস থাকে রাত।
বউ বেটিদের হয়না কষ্ট পুষতে হাতির পাল
শ্বশুড় শাশুড়ির পাতে দিতেই শুষ্ক তাদের গাল।"
পরদিন প্রত‌্যুষে গিয়ে পিতৃ ভূমি পাশ
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে যেন মরা লাশ।
লাথি মেরে সজোরে ভূঁয়ে কহে,''সর্বনাশা
এমনি করে কেড়ে নিলি আমার সকল আশা?
শ'য়ে শ'য়ে আছে যাদের কড়া-গন্ডা-কাঠা
তাদের না হয় লোভ দেখাবি ওরে বোকা পাঠা।
পিতৃভূমি ছিল মোদের মোটে বিঘে দুই
তারি লোভ দেখিয়ে ভাইকে কেড়ে নিলি তুই?"
দু'মাস পরে এলো সে ভাগাভাগির দিন
হিসেব করে শুধাতে হবে আজ ভাই ভগিনীর ঋন।
ছোট ভাইকে ডেকে কহে,''দুই বিঘে মাত্র জমি
ভাগ করিব আমি একা নিবে শুধু তুমি।
এক ভাগেতে মা জননী আরেক ভাগে ভূঁই
যে ভাগ খুশি মনে চাহে নিতে পারিস তুই।
খবরদার! এক ভাগই পাবে আরেক ভাগের দাবি
পায়ে ধরেও কাঁদিস যদি একরত্তিওনা পাবি।"
মুচকি হেসে বলে অনুজ,''চমৎকার ভাগাভাগি,
এ কামনাই করেছিলাম দিবা-রাত্র জাগি।
এক ভাগেতে পুরো জঞ্জাল আরকে ভাগ ধনে
জমির ভাগটা দিয়ে দাও ভাই তর সইছেনা মনে।
বেরোও এবার বুড়ি নিয়ে মাতৃপ্রেমি বোকা
নিজের ভুলেই নিজে এখন খেলে বড় ধোকা।
আর্জি আরজ নিয়ে যদি ফের ঢুকো এ বাড়ী
তবে যেনো তোমার সাথে মস্ত বড় আড়ি।"
শুনে হেসে বড় বলে,''সাচ্চা কথা ভাই!
আমার মত বোকা বুঝি এ জগতে আর নাই।
খুশিমনে আজকে তুমি যাহা দিলে আমায়
দুইয়ে কেন হাজার বিঘের মূল্যে কি তা মানায়?
বোকা বলেই আজকে তাহা পেলাম ভাগ্যগুণে
বুদ্ধিমান হতে চাই না এমন রত্ন বিনে।
দোয়া করিস এমন বোকাই থাকতে যেন পারি
বুদ্ধিমান হয়ে মায়ার মাকে যেন না ছাড়ি।।"