আমি শ্রমিক নই শিল্পী, দেশ গড়ার নিখাদ কারিগর
সবাইকে গড়িয়ে দিয়েছি প্রাসাদ আমার কুড়েঘর।
সবার দিয়েছি অশ্রু মুছে আমার অশ্রু চোখে
স্বপ্ন দিয়েছি এঁকে সবার ব্যাথা নিয়ে বুকে।
সাভার,গাজীপুরের একমুঠো অপাংতেয় মাটি
কেন আজ সোনার দামে?
সে কেবল ভিজেছে বলে আমার ঘামে।
পদ্মার বুকে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নচারি পথ
তুমি কি দেখ নাই?
পঞ্চাশ লক্ষের এক কোটি হাত নিম্নে উঁচিয়ে ধরেছি তাই।
আমিই করেছি উন্নয়নশীল হতে স্বল্পোন্নত
আবার আমিই করব উন্নত।
ঝলসানো রুটি সদৃশ পর্ণিমা চাঁদ এখন আর দেখতে হয়না
'ভাত দে' 'ভাত দে' বলে অনাহারি শিশু আর আর্তনাদি কথা কয়না।
বলতে পার এ কাহারি দান?
বুকে হাত রেখে বলছি আধেক হলেও আমার অবদান।
পনের শ ডলার মাথা পিছু আয়
এ বাংলায় কভু কি ভাবা যায়?
কিসের বৌদলতে বলতে পার ভাই?
তার কি অবদান কিছু মোর নাই?
চোখের সামনে এত বদল, এত আলোর বিচ্ছুরন
বছর কুড়ি আগে ভেবেছ কি কখন?
আমি বদলে দিয়েছি বাংলাদেশ
কিন্ত বদলাইনি আমার বেশ।
আমি গড়েছি অনেক সিঁড়ি, অনেক উর্ধ্বমুখি রথ
কিন্ত গড়িনি আমার পথ।
আমার আয়ের শতভাগই নিরেট, নির্মল, বিন্দু ভেজালহীন
তাইতো আমি দ্বীনহীন।
আমি পতাকা ধুঁইয়ে দিয়েছি আমার বুকের ঘামে
তা আমি, তুমি, সে কেইনা জানে?
আমি বঞ্চিত বটে, অবাঞ্চিত-অবহেলিত নই
আমাকে ধিক্কার দেবার দু:সাহস তোর কই?
অস্পর্শ নই আমি, তবু নাশিকা কুঞ্চিত করে বলিস 'পালা'!
আমি না থাকলে পুরনো সেন্ডেল চুরি করে খেতে হত শালা!
নাই দিলি, নাই পেলাম জিন্দাবাদ!
কস্ট নেই, শুধু জেনে রাখিস, এ বাংলায় আমি শ্রষ্টার আশির্বাদ।
তিন লক্ষ কোটি, আরো এক চল্লিশ হাজারে
কেনা বেচা হয় আজ বাংলার বাজারে
একটি নকশি কাথা,
তার বুননের পরতে পরতে আমার হাতের শ্রমগাথা।
তুমি দিয়েছ স্বাধীনতা, আমি দিয়েছি স্বনির্ভরতা
তুমি দিয়েছ ভূমি, আমি দিয়েছি উর্বতা।
তুমি দিয়েছ বাটি, আমি দিয়েছি ভাত
আমি হৃস্ট করেছি অবাঞ্চিত বাংলার জাত।
অবদান আমার কিসে কম?
তবুও খড়গ হস্তে মম শির উর্ধ্বে দন্ডায়মান অত্যাচারি যম।
সুদান, সোমালিয়া, বেনিন, নাইজার সবইতো স্বাধীন দেশ
আছে কি তথা কিছুমাত্র স্বাধীনতার রেশ?
থাক সহস্র যোজন দূরত্বব্যপি মানচিত্র, থাকুক শুশোভিত পতাকার ছড়ি,
গৃহে শুকনো ভাতের হাড়ি আর কিছু সিকি আনা কড়ি,
জীর্ণ গোয়ালে শীর্ণ কংকালসাড় কিছু গাই-বাছুর,
একি স্বাধীনতা?
খাঁচামুক্ত পাখি মানেই স্বাধীনতা নয়
বৃক্ষে, ডালে, পত্রতলে তার খোরাক থাকতে হয়।
দু'দিনের উপোশ পেটে তাঁকালে চাঁদের দিকে
পূর্ণিমা চাঁদও যেন অপাংতেয় ফিকে।
অর্থ ছাড়া স্বাধীনতা,
সেলাই বিহীন নকশি কাথা।
সে অর্থ এ বাংলায় দিয়েছে আমার হাত
এনেছে পুবে রক্ত লাল এক সোনালী প্রভাত।
বাংলাদেশ যদি হয় একটি যুদ্ধক্ষেত্র
আমি তার অগ্রসেনা
কারণ আমার ঘামেই আজকের বাংলাদেশ কেনা।
বাংলাদেশ যদি হয় ভাসমান তরী
আমি তার উড়ন্ত পাল,
আমি সবুজের মাঝে সূর্য্যের টকটকে লাল।
বাংলাদেশ যদি হয় চলন্ত ট্রেন
তুমি তার ঝুলন্ত যাত্রী,
আমি তার জ্বালানী
তবু যেন আমি ফেলানি।
তুমি স্বীকারিলে কিংবা নাই স্বীকারিলে, কস্ট কিছু নাই,
কস্ট শুধু একটাই, আমি আমাকে চিনি নাই।
যেদিন চিনব আমায় আমি
বিশ্ব চিনবে আমায়, জানবে কতটা দামি।
সেদিন বেশি দূরে নয়, প্রয়োজন কেবল মনের একটু অভ্যুদয়।
আমার যে হাতে বিশ্ব শোভিত
সে হাতেই ইট, ছুড়কি, বাঁশ, কাষ্ঠ !
শুশোভিত গৃহচূড়া হয় ভূ-তলে প্রথিত !
না না না, এ আমি নই, এ আমাার প্রেতাত্না,
দূষিত দেহে পুষিত খুন,
সুস্বাদু ব্যঞ্জনায় একটু অতি মাত্রায় যেন বালু মিশ্রিত নুন।
কিছু রক্ত চোষা ছাড়পোকা? ওতো গৃহে থাকবেই
তাই বলে কি আমার আক্রোশ অনাসৃত পথে ঝড়বেই?
গার্মেন্টস্ আমার গৃহ, আমার আঙিনা
তাই পুড়াব আমি কিনা!
নিজ গৃহে আগুন দিলে
মনুষ্য ভিবেক খোঁজ কি মিলে?
না না না, না ভাই না
ইট, বাঁশ, কাঠি, লাঠি এ আমার হাতিয়ার নয় বোন
আমার হাতিয়ার হবে কাগজ, কলম আর ঝলন্ত মাইক্রোফোন।।