(স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে)


হায় ডাক হরকরা  কোথায়?
যাহারা আসিত লন্ঠন হাতে রোদ বৃষ্টি মাথায় l
তাদের মর্যাদা নতুন প্রজন্মের কাছে,  
চিঠির আবেদনের মত অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়েছে।


জং ধরা ডাক বাক্সটা যেন ছানি  পড়া চোখের যন্ত্রনা,
এখন আগের মত মানুষেরা  চিঠি  লিখে না।
সময়ের ব্যবধানে ভালোলাগা অনেক কিছুই বিরক্ত  লাগে,
এমনকি প্রিয়জনের  নামটাও ভুলে যায় আগেভাগে।


কে জানিতো পৃথিবীতে এমন দিন আসিবে?
সকল ক্ষেত্রেই অবিরাম বিশৃঙ্খলা দেখিবে।
রাতের অন্ধকারে নক্ষত্র দেখার অবসর কোথায়?
অর্থের প্রলোভন আর  ভাঙ্গাচুড়া সম্পর্ক যেথায়।


পুরনো দিনের চিঠি গুলো একেকটি স্মৃতির উঠোন,
দিনের ব্যস্ততার পর  চলতো চিঠি পাঠের আয়োজন।
বহুবার পড়েও হয়নি শেষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ,
এখন খুব মনে হয় চিঠি  গুলো যদি না হারাত।


সন্ধ্যার জলের মত অক্ষরগুলোতেও বিষন্নতা  থাকতো,
হয়তো আবার সব ব্যথা দুঃখ নিমিষেই দূরে সরে যেত।
সংবাদের অপেক্ষায় ক্ষয়ে  গেছে সুখ , প্রশস্ত সে রাতি,
সব ক্লেশ মুছে অবশেষে জ্বালিয়েছে আশার বাতি।  


ফ্যাকাসে পাতার মতো পুরনো চিঠিগুলো স্মৃতির সুটকেসে,
মৃত্যু মুরব্বিদের সার্টিফিকেট, পড়ে আছে ধূলিঝরা ইতিহাসে
তখন কষ্ট গুলো  হুহু করে উঠে বুকের ভিতর,
নক্ষত্র পুরাতন হলেও,  কমে না নাবিকের  কাছে তার  কদর।  


পরম মমতায় জড়িয়ে  আছি, সেই চিঠি আজও নিয়ে বুকে,
ফুলের শুকানো পাপড়িঁর মতো স্মৃতিও ঘুমিয়ে থাকে দুঃখে
একটি চিঠি কতো কৌতূহল হয়,জোনাকি  কিভাবে জ্বলে?
অতীতও বর্তমান হয়ে ফুঁসে উঠে, বিপ্লবী চাষার লাঙ্গলে ।

যে চিঠির প্রতিটি শব্দ, বাবার স্বপ্ন ভোরের সূর্য হয়েছিল,  
যে চিঠির প্রতিটি শব্দ, মায়ের অশ্রু হয়ে ঝরে ছিল।
যে চিঠির প্রতিটি শব্দ, প্রেয়সীর কাছে দুপুর হয়ে জ্বলছিল,
যে চিঠির প্রতিটি শব্দ, বিপ্লবীদের ঘুমাবার স্বাদ হারিয়েছিলো


যে চিঠি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল, এনেছিল জনতার  বিশ্বাস ,
যে চিঠি ছিল প্রতিবাদী কবিতা, কাঙ্খিত স্বাধীনতার আশ্বাস।
যে চিঠি রেসক্রস ময়দানে উচ্চারিত হল বিদ্রোহী রণক্লান্ত,
সে চিঠি নিপীড়িতদের কন্ঠে আজও স্বাধীনতার মূল মন্ত্র।


হায়!ডাক হরকরা  সাইকেলের ঘন্টায় এখনো বিষাদের শব্দ
হায়!মুক্তিযোদ্ধা!কতো স্মৃতি,কতো অশ্রই না করেছিলে জব্দ!
জীবনের কতো অস্থিরতা,এখনো কতো রাত ধুপ হয়ে জ্বলে
তবু মানুষ পুরনো স্মৃতি বারবার  ধুলোমাখা চিঠি থেকে বলে!