সোনাঝড়া রোদে  যেন  সোনারং মাখানো ধান হাসতো,
ফর্সা পা দিয়ে ঘুরে ঘুরে মা,সারা দুয়ারে ধান ছড়াতো।
উঠোনের পাশে কাঁঠালিচাপার গন্ধ ভেসে আসতো,
তখন পায়ে ঘুঙ্গুর বাধা কবুতর, ধান খুটে খুটে খেত।


মা আমাদের অন্তহীন জীবনের গল্প শুনাতো,
রাত কাটতো তার  নিদ্রাহারা পাখিদের মত ।
নির্জন বেদনা অল্প বয়সে স্বামীহারা সংসারের আর্তি
প্রতিটি মা ধৈর্যের কবি, মমতার কবি,বেদনাতেই যেন স্বস্তি।


মাকে নিয়ে কখনো সংসদ ভবনে ঘুরতে যাওয়া হয়নি,
এমনকি সমুদ্র, পাহাড়, মহাস্থানগড় দেখতে আসিনি।
সুন্দরবন, জলপ্রপাত,  বিশ্ববিদ্যালয়  তেমন কিছুই না,
বারবার যেতেন জন্মভূমি  ব্যাসপুর,মমতায় জড়ানো গা।


একবার কীর্তনাশা নদী পার হতে যেয়ে বলেছিলেন বেশ
চোখ জুড়ানো এত বড় নদী আহা  কি সুন্দর বাংলাদেশ!
হয়তো তারও ঘুরতে ইচ্ছে করতো, সময় হয়ে উঠতো না,
এভাবেই  ধূসর পাতায় সন্ধ্যা আসে,আহা থাকে অজানা ।


তাকে নিয়ে আমরা কখনো দামি রেস্তোরায় খাইনি,
জাদুঘর, শিশুপার্ক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও কখনো যায়নি ।
ফেব্রুয়ারির বইমেলায় মোরক উন্মোচন  অনুষ্ঠানের শিহরণ,
সেই উৎসবে যদি থাকতেন,শুধুই স্মৃতি নিদ্রা আর জাগরণ।


দেখাহয়নি,রূপসী নগরী, পদ্মাসেতু ঝলমলে হাতিরঝিল,
শুধু লাবণ্য ভরা পূর্ণিমার চাঁদদেখে, হেসেছে অনাবিল।
আমাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস  শুনতাম তার মুখে,
পূর্ণিমার চাঁদ উঠে ঠিকই শুধু পাইনা মাকে সুখে আর দুঃখে।


মুক্তিযুদ্ধের  গর্বিত কবিতার মত তোমার চোখের জ্যোতি ,
তোমার লাউ গাছের ডগায়  ভাসে অতীত দিনের স্মৃতি।
বাড়ির ঘাটে  খেয়ানৌকায় এখনো মানুষ পারাপার হয়,
উঠোনে ঘুঘুরা জ্বর হলেও কে জানে গন্তব্য কোথায়?


যদি কোনদিন এই খেয়াঘাটে  আশার কাঙ্খিত সেতু হয়,
সেদিন ভাববো তোমার চেষ্টা সার্থক, অনন্ত স্বপ্নের জয়।
তুমি স্বপ্ন দেখতে  নদীর দুই পাড়ের মানুষের মিলনে,
তোমার মৃত্যুর বহুদিন পরেও এখন আশার স্বপ্ন বুনে।


তোমাকে নিয়ে আর দেখা হয়না বিকেলের লাল মেঘ,
কদরের রাত্রে রাত জাগা ইবাদত,আহা কি  সে আবেগ?
তোমাকে নিয়ে আর যাওয়া হলো না, রাসুলের রওজায়,  
চৌদ্দ বছর আগের দেয়ালঘড়িটা এখনো বিষাদের ঘন্টা বাজায়।