["কাগজের ডানা"- NurunnaharShireen -এর কবিতাকে উপলক্ষ্য করে।]


প্রিয় হারানো বাসিন্দা,


এতদিনে মনে পড়েছে বলে অশেষ ধন্যবাদ।
এখন তো মফস্বল অজপাড়াগা, আবাইদ্দ্যা-চাষাদের ভাগাড়, শস্যলে ঘামঘ্রান ছিন্ন করে অসভ্য গালি ছাড়া, এখন কি আর আমার কথা মনে পড়ে তোমার? ঠিকই বলেছ, এখন তেমন তেজালো আমি নই, মেরুদন্ড ভেঙে গেলে কার এত তেজ থাকে, বল! শুনলে অবাক হবে, গাঁয়ের ভেতর হাজার বছরের পুরাণ নদীটা এখন আর নেই। গলাটিপে মেরে ফেলেছে তাকে। শেষবার, সে কি কান্না ছিল তার!


উঠানে, ডালিম গাছের তলে যেখানে পুতুল-বিয়ে হত, চলত একদা, আকাশ-মাটির সঙ্গমনের লীলা, বৃষ্টি হাহাকারে ব্যাঙের বিয়েতে কেঁদেছ বহুবার, সেটা এখন তন্দুরী ভাটা। কি করে ঘুম থাকে প্রশান্তির, শ্মশান ঘাট গেল, মজুমদারের ভিটে-মাটি, পালের মিষ্টি দোকান... কত কী যে গেল... কত হাজার নষ্ট পদচিহ্নে কেঁপে উঠি নিজেও জানিনা।


একদা গোমতীর ঢেউ, তোমার বাল্যকালের ছোঁয়া, তীরবর্তী বালুঘর, নগ্নতার ছলে যেসব তর্জনী শিখায়েছে, জীবীকা পুরাণ ও সতত ধ্যানমগ্ন নীরবতা; খোলস বদলে যাওয়া আফিম আর সভ্যতার কোরাস, তোমাকে মফস্বল থেকে অনেকটাই বিতারীত করেছে।


কাকতালীয়ভাবে, ছোকড়াদের বোমার আঘাতে তোমার দাদীমার সাথে বাড়ির পোষা কুকুরটা আর পেয়ারা গাছটা মারা গিয়েছিল। গাঁও-গ্রামের জনতা জমা হল সেবার, কি কারনে পিপিলিকার সারির মত লোক ভালবাসত তাকে, তার দয়া ও সুখ-দু:খের স্মৃতি বয়ে গেল তারা; একারনে তোমার দাদীমা হল মফস্বলের মা।


ঠিক তার তৃতীয় সপ্তাহের মাথায় যে মানুষটি বোবা হয়েছিল, দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরত তার, যেন আজন্ম হিসেব কষে ঝিম মেরে মাটির কাছে কি যে শিখত, আলাপন, এমন নিগুঢ় কথায় নিমগ্ন থাকত যে, বাড়ির কাউকেই চিনতে পারত না আর, রোদ-বৃষ্টিতে পোক্ত হয়ে ওঠা দশাসই বুড়ো মানুষটা গাছের নিচে তার দীর্ঘ অবস্থানকালে ভাব করেছিল কোমল ব্যাঙের ছাতা, বুনো ফুলের ছত্রাক ও মেঘবর্তী বালিকার সাথে, ইচ্ছেমত নিজের ওজন বাড়াবার ক্ষমতা অর্জন করেছিল সে- , এই লোকটি ছিল তোমার দাদা, যাকে কবরে নামাতে সতেরজন মানুষ লেগেছিল। সেখানকার বাতাস এখনো ছেয়ে যায় প্রাচীন ও নিবিড় বহিরাঙ্গনের সুবাস। যে মানুষটি শেষ পর্যন্ত শুধু তোমাকেই খুঁজে গেল, একটিবার দেখার জন্য কী যে আহাজারী ছিল তার! মফস্বলের এই মানুষটির কথা একবারও কি মনে পড়ল না তোমার? সবকিছু শেষ হলে তখন কি মনে পড়ল?


ঠিক আমি মফস্বল বলে, আমার মফস্বলের বাসিন্দাকেও তুমি ভুলে গিয়েছিলে! হয়ত এই কারনে আমি তোমার স্মৃতির চে' ঢের বেড়েছি বাহুল্যে।


                                         - ইতি মফস্বল


- মাহফুজ
  বনশ্রী
  ১৩/০৫/২০১০


[বি.দ্র. অবশেষে লোভ সামলাতে পারলাম না। তাড়াহুড়ো করে লিখলাম। বানান ভুল আর বাক্য বিন্যাস শংকায় থেকে গেল।