আমি তোমাদের এই নগ্ন বিবেকের সমাবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
অভ্যস্ত হয়ে গেছি কিভাবে হাজার মানুষ ঠেলে
বোবা হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।


রিক্সার সাইরেন, ট্রাকের চাকার শব্দ,
পাড়ার মোড়ে উঠতি বয়সী ছেলেদের অশ্লীল গান,
দেয়ালে দেয়ালে টাঙ্গানো নগ্ন সিনেমার পোস্টার দেখেও
চুপ করে থেকেই অপেক্ষা করতে পারি যমদূতের জন্য আরো কয়েকটা জনম।


রাতের ঝলমলে আলোয় আর্মি স্টেডিয়ামে
যে কনসার্ট হয় তাতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই,
আগে অবশ্য ছিলো
নামি-দামি ব্যান্ডের শিল্পীদের আলো ঝলমলে কনসার্ট শুনে
রাস্তায় আসতেই দেখি বছর ছয়েকের একটি ছেলে
কারো দেওয়া চাদর পেচিয়ে কয়েকটা কুকুরের সাথে আছে শুয়ে।


সেদিন আমি বিদেশি মদের ঘোরে
আমার দেশ আমার রাষ্ট্রকে দেখেছি গুটিশুটি হয়ে বিবেকের আদলতে পড়ে আছে।
আপনাদের সম্মানে টর্নেডোর মতো আঘাত হানবে বলে আমি এই সংঘের একজন সদস্য হয়ে
দেশকে কোলে তুলে নেই নাই আদর করে।


এরপর আরো একদিন আরো হাজার দিন এরোপ্লেনের প্রচন্ড শব্দ
কিংবা ট্রেনের হুইশেল ছাপিয়ে যখন কানে বাজে কিছু দিয়েযান বাজান,
আমার বা পাশে তাকিয়ে দেখি ল্যাংটা ছেলেকে কোলে রেখে একজন মায়ের আর্তনাদ।
কিন্তু আমিও এই সংঘের দশজনের মতো বলি
নষ্ট মেয়েছেলে ভাত খাওয়ার মোরদ নাই পেট বাধাইছিলি ক্যানে।  


আজ আমি ভিখেরী, আপনারাই আমার সর্বস্ব লোট করে নিয়ে গেছেন
আমার বুকের বা পাশের মানবিক মিটার আজ অকেজো, মাথার ভেতরে আর চিন্তাচেতনা নাই।
আপনারা আমাকে উন্মাদও বলতে পারেন
যদি তাই ভেবে থাকেন তাহলে
এই উন্মাদ সজ্ঞানে ঘোষণা দিচ্ছে আমি আর আপনাদের সংঘের কেউ নই।
আমি সংঘ ত্যাগ করলাম শুধু চাপা প্রতিবাদ করার শক্তিটুকু নিয়ে।


উন্মাদ ও সংঘহীন আমি নগ্ন বিবেকের ভারে নুয়ে পড়ে চুপ করে প্রতিবাদ জানাই যারা স্বাধীনতা বেচে প্রতিরাতে রাজনীতি কোম্পানির মদের গ্লাসের বিনিময়ে।


যারা বুদ্ধিজীবী ট্যাগ লাগিয়ে আলোর মঞ্চে লাল গালিচা মাড়িয়ে
সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে দেশোদ্ধারের লেকচার দিয়ে পয়সা গুনে, আপন মনে ছুটে চলে বিদেশ ভ্রমণে।


যে ছাত্রের মাথা খায় টিফিন বক্সে বুলেট বোমা রেখে, গরীবের চালের বস্তা চুড়ি করে,
সস্তা কলমের খোচায় রাস্তা কমায়, খাল কেটে খাল ভরে
সমুদ্র পরিমাণ অর্থ সরায় তারাই
আমাদের এই জনসভার মধ্যমণি
অথচ ওই গঞ্জের পতিতার ঘামের শরীরও খেটে খায় লুটে নয়
কিন্তু সব ঘৃণা তার হয়।


ধর্ম বেচে তোমরা যারা বিধবা এই বাংলার যমুনা ধারায় অনবরত করছ কামনার চাষ
যারা মগজ খেয়ে চামচা বানাও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্লাস রুমের বই খাতা থেকে জানালার কাচ
আমি প্রতিবাদ জানাই সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বারংবার, সূর্যের উত্তাপের মতো প্রচন্ড, বৃষ্টির মতো ধেয়ে আসা তীরের সমানুপাতিক হারে।


জানি আমার প্রতিবাদে কিছুই হবে না
কোন বাতাসও লাগবে না কারো গায়ে
কারণ আমি এই জনসমুদ্র সংঘের  শব্দহীন ঢেউ
কিংবা চায়ের দোকানের টুংটাং আওয়াজে গ্লাস ভাঙা প্রতিবাদী কবি।