হোটেলের ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে ছিলাম চুপচাপ;
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ভেসে আসছে পাহাড় চুড়ো হতে,
মনেসট্রির গম্বুজ হতে পত পত ভাসছে শান্তির বানী;  
দূরে...... রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপে সম্মোহিত চারিদিক।
ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লাম কলবং ফরেস্টের পথে,
হাঁটছি, একা হাঁটছি......মেঘ নেমে এলো পাইনের পাতায়-
সিক্ত যুবতী জারুলের রঙ ছড়িয়ে পড়ল পাহাড়ের গায়ে!  
আমার সব দিলাম,সব কিছু দিলাম সঁপে তার নিবিড় আলিঙ্গনে!
ভিজিয়ে দিল সব... ডুবিয়ে দিল আমায় তার মুহূর্ত প্রেম-
আমি হাঁটছি দিক্বিদিক শূন্য, মোহগ্রস্তের মতো নির্বিকার!
ছাতায় আসুন,বাঙালি?কবে এসেছেন? ছুটি কাটাতে?
কেমন লাগছে জায়গাটা? কোথায় উঠেছেন?একা?
আমি বললাম বাঙালি না জেনে আপনি বাংলায়...
এত প্রশ্ন করলাম তো! আসলে কি জানেন বোঝা যায়-
আমি বললাম কি?
ওই যে বাঙালি ছাড়া এমন পাগলামো অন্য কেউ পারবে না!
পাহাড়ে যখন তখন বৃষ্টি নামে,বরষাতি,ছাতা কিছুই তো নেন নি!
আমি কি যেন একটা বলতে গেলাম অমনি থামিয়ে সে বলল,
অবশ্য ঠিকই করেছেন,প্রকৃতিকে না ছুলে তাকে বোঝাই যায় না।
বৃষ্টির মেঘ ধীরে ধীরে আমাদের ছেড়ে-দূরে কোথাও গেল চলে,
অন্যকোন পাহাড় শরীর ভিজিয়ে দিতে।
পড়ে পাওয়া চার আনার মতো,
আমি তার সারল্যভরা বকবকানি শুনে যাচ্ছিলাম,
প্রশ্ন গুলো শুনতে শুনতে অনেকটা পথ চললাম একসাথে-
আমায় কিছু বলার অবকাশ না দিয়ে
প্রশ্ন আর উত্তর সবই সে নিজেই বলে গেল অবিরত;
একটুখানি ফুরসৎ পেয়েই আমি বললাম
আপনি তো ছাতা নিয়ে হাঁটছেন, এখানে থাকেন বুঝি?
না, বাবামায়ের সঙ্গে এসেছি বেড়াতে,
মায়ের খুব ঠাণ্ডার ধাত তাই জোর করে ছাতা ধরিয়ে দিলেন,
কি আর করি অগত্যা......
মনে মনে ভাবছিলাম ভাগ্যিস দিয়েছিলেন,
না হলে যে এমন বক্র পথে সরলরৈখিক সান্নিধ্য পেতাম না!
শীতল বৃষ্টি বিন্দু তার কপোল বেয়ে নামছে তখনো;
আমি বিহ্বল হয়ে দেখেছি শুধু চেয়ে-
জানেন পাহাড় আমার খুব ভালো লাগে,
অনেকবার পাহাড়ে গেছি তবে এখানে এই প্রথম।
বিকেলে আসুন না মনেসট্রিতে, বেশ জমিয়ে গল্প হবে,
ওখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আরও রূপসী লাগে;
কথায় কথায় আমরা ফিরে এলাম,
হোটেল অর্কিডের সামনে এসে সে বলল এখানেই আমরা উঠেছি; আসি-
বিকেলে আসবেন কিন্তু মনেসট্রিতে-ওই পাহাড় চুড়োয়;
অনেক গল্প হবে, আসবেন তো?  
আমিও যে এই হোটেলেই উঠেছি তা আর তাকে বলতে পারিনি,
ঘাড় নেড়ে আমি যে তাকে ঠিক কি জানালাম তা নিজেও জানি না!
বিকেলে যে আমি ফিরে যাবো আমার বিষণ্ণ দ্বীপে-  
সে আমায় যেতে বলেছিল পাহাড় চুড়োয়-
আমার অপেক্ষায় হয়তো এখনো সে বসে সেথায়,
হে অপরিচিতা তুমি যাও ফিরে-
গাড়ির জানালার কাঁচ সরিয়ে তাকিয়ে ছিলাম মনেসট্রির দিকে;
ধীরে ধীরে পাহাড়ের বাঁক বেয়ে নেমে এলো অন্তরাল,
চির অন্তরাল।
একরাশ অপরাধবোধ নিয়ে ফিরছি পাহাড়ের গা বেয়ে,
ফিরে চলেছি আমার গহীন আঁধার পুরনো গুহায়,  
ক্ষমা করো, আমি যে তোমার বিকেল ছুঁতে পারলাম না-
আমার যে কোন বিকেল ছোঁয়া হয়ে ওঠে না!
আমি যে কোন বিকেল ছুঁতে পারি নি আজো।