সেই বৃষ্টিভেজা কোন এক উষর শরতে তার জন্ম,
রাতের শেষভাগটায় তার জন্ম বলে,
বেশিরভাগ মানুষই ছিল অচেতন।
পাখিরা গাইছিল না গান,
ঝিঁঝিঁ পোকারাও পড়েছিল ঘুমিয়ে।
মায়ের উদর ভাঙ্গা পানি আর
নাইট্রোজেনঘটিত জলে ঘরের মাটিটা কাদা হয়।
সে কাদা অনেকটা তার গায়ে মাখে।
সে শীতে কি যে তার কষ্ট?
কেই বা তা বুঝবে।
আরো কিছুক্ষন পর,
যখন তার প্রভু বুঝতে পারল,
তখন সে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল তার উপর,
পাজাকোলা করে নিয়ে এল বাইরে,
তখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।
সাপটে ধরে তার খুড় ছিড়ে নিল,
দুধ পায় পায় না সে,
এমন করেই বড় হতে থাকে।
এমন একটা সময় আসলো
যখন সে না পারে খড় চিবোতে,
না দেয় মায়ে দুধ।
তার পর তার গলায় রশি পড়ল,
সে হল চিরবন্দী।
ভাবত যদি একবার ছুটতে পারতাম!
একদিন!একদিন সে ছুটেই গেল!
অনেক দিনের হাটাচলার তৃষ্ণা মেটালো।
বিনিময়ে পুরষ্কার পেল খুব।
মনিব ধরবার পর সে কি মার!
পিঠে তার দাগ ন'দিন ছিল।
তারপর আর ছুটবার ইচ্ছা তেমনটা ছিল না।
দিনের পর রাত আসে,
এভাবে ঈদুল আযহা কাছে আসে।
অনেকের মুখে গরুটি শোনে সে কথা।
সবাই নাকি মুক্তমনে খুব আনন্দ করবে।
ঈদ বলে মনিব তার জন্য কিছু ভাল খাবার দেয়।
ভূসি,গুড়া,খুদের চাল,তরতাজা ঘাস।
ঘাস কাটবার কাস্তেটা
তার সামনে একটা বেড়ায় গোজা থাকত।
তার মন চায় সেইটে কাছে পেতে,
রশিটা কেটে চির মুক্ত হতে।
ঈদের দিন ঘনিয়ে এলো।
তার স্বপ্ন উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করছিল।
ঈদের কদিন আগে তাকে সাজিয়ে
তার মতো অনেকের কাছে নিয়ে এলো।
সেখানে অনেকের চোখে জল।
তারও চোখে জল এলো।
দেখল,কিছু লোক ক'টি কাগজ দিয়ে
তাকে নিয়ে গেলো।
অবশেষে ঈদের দিন তার স্বপ্ন পূরণ হলো।
সে কাছে পেল,
তবে কাস্তে নয়,কাটারি,
আরো বড়,আরো ধারালো।
তবে তাকে মুক্ত করবার পূর্বে
আরো কগাছি দিয়ে বাধল।
বাধন কেটে দিল।
সব রশি খুলে দিল।
তার একটি চোখ আকাশে তাকিয়ে রইল।
আর এক মাটিতে চেপে আছে।
আজ সে শুধু মুক্ত নয়,
মুক্তির চেয়েও আরও কাছে।