স্নিগ্ধ ভোরে দীঘির পাড়ে গিয়ে দেখি
নীল রঙয়ের দুটি পদ্মফুল দুলছে।
আমার মনে পড়ে গেল,
তুমি সেদিন বলেছিলে,
পদ্মফুল তোমার ভীষণ পছন্দ।
মনে মনে ঠিক করলাম
এই ফুল দুটো তোমার জন্য।
সাত সকালে সর্দি জ্বরের ভয় ছেড়ে
তোমার ভালবাসা পেতে
নেমে গেলাম দীঘির জলে।
ফুল দুটো তুলে আনতে।
সারা শরীর ভিজে গেল আমার।
কাছে গিয়ে খুব যত্ন করে ছিড়লাম ফুল দুটো।
যেন ফুলের গায়ে একটুও আঘাত না লাগে।
তাহলে হয়তো তুমি পছন্দ করবে না।
সেই ভয় ছিল আমার ভেতরে।
ফুল ছিড়ে নিয়েই সোজা তোমার পানে দৌড়।
ফুল দুটো আমি তোমাকেই দেব।
তুমি ফুল দুটো নিয়ে একটু লজ্জা পেয়ে
হাত দিয়ে মুখ ঢাকবে।
আমি তাকিয়ে থাকব তোমার দিকে।
তমার কথা ভাবতে ভাবতে
চলে এলাম আমাদের সেই
প্রথম দেখার ফুল বাগানে।
হাত বাড়িয়ে ফুল দিয়ে বললাম,
“তোমার জন্য”।
তুমি বললে, “সত্যিই আমার জন্য?
কোথায় পেলে?”
আমি বললাম, “আকাশ ফুড়ে গিয়েছিলাম,
চাঁদের দেশ থেকে নিয়ে এলাম”।
তুমি বললে, “মানুষ কি চাঁদের দেশে যায়?
তুমি কি নেবে আমায়?”
আমি বললাম, “নিতে পারি।
যখন আমার ঘোড়া হবে।
যখন আমার ঘুড়ি হবে।”
চলে এলাম আমি তোমার কাছ থেকে।
তোমার জন্য ঘুড়ি বানাবো।
কাগজ সুতো সবই ছিল।
কাঠি নিয়েই বসে গেলাম।
ঘুড়ি বানাতে শিখি নি কোনদিন।
কিন্তু বানাতে আমাকে হবেই।
এই ঘুড়ি নিয়েই আমরা যাবো
স্বপ্নের সেই চাঁদের দেশে।
মেঘের মধ্যে স্বপ্ন দেখব আমরা।
জলের মধ্য থেকে আমাদের দেখে
হিংসায় মরবে জলকুমারী।
আমি তখন তোমার কাধে মাথা রেখে
ভেসে বেড়াব চাঁদের দেশে।
তুমি থাকবে আমার সাথে।
মেঘের সাথে যুদ্ধ করবো আমি।
তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে।
তোমার মুখের হাসি আমাকে
যুদ্ধ জিতিয়ে দেবে।
হেরে যাবে মেঘেরা।
সেই বেদনায় বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাবে সব।
আমরা তখন প্রাণ খুলে হাসবো।
মেঘদের অশ্রুবৃষ্টিতে ভিজবো দুজনে।
উড়ে উড়ে যাব চাঁদের দেশে।
হিংসা হবে পাখির তখন।
ডানা নিয়ে কোনদিন সে চাঁদের দেশে
উড়ে যেতে পারে নি।
স্বপ্ন নিয়ে উড়ব আমরা।
সেখানে বাধা থাকবে এক বিন্দু ভালবাসা
আর ফুটে থাকা দুটি ফুলের ঘ্রান।
একসময় আমার ঘুড়ি হলো।
ঘুড়ি নিয়ে যখন বাইরে এলাম,
তখন দেখি সব কিছু বদলে গেছে।
সেই দীঘিতে আর পদ্মফুল নেই।
শেওলায় ভরে গেছে।
বুঝতে পারলাম,
অনেক দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে।
ছুটে গেলাম তোমার কাছে।
আজ ঘুড়ি বানিয়েছি তোমার জন্য।
অনেকক্ষন পর তুমি এলে শাড়ি পড়ে।
দারুন সুন্দর লাগছে তোমাকে।
আমায় দেখেই কেঁদে ফেললে তুমি।
বললে, “কোথায় ছিলে তুমি?”
আমি বললাম, “তোমার জন্য ঘুড়ি বানিয়েছি।
দুজনে মিলে চাঁদের দেশে যাবো”।
তুমি বললে, “তোমায় পেলে চাঁদের দেশে
না গেলেও হতো।ঘুড়ি কেন?”
আমি বললাম, “তুমি বলেছ।তাই ঘুড়ি বানিয়েছি।
চলো, তোমায় চাঁদের দেশে নিয়ে যাবো”।
তুমি বললে, “সেখানে এখন আমায়
অন্য কেউ নিয়ে যায়”।