মায়ের চোখে ঘুম নেই।
ছেলে তার বেড়িয়ে গেছে সতের দিন আগে।
কোন এক সাইবার ক্যাফের উদ্দেশ্যে।
সাথে বাবার দেয়া 'অ্যাপল' এর একটি ল্যাপটপ।
একটা কিবোর্ড,একটা মাউস।
তার প্রিয় সেই পাখির ছবি আঁকা মাউসপ্যাডটি।
বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম এর চারটা ডিস্ক।
বড় বোন শখ করে একটা হেডফোন দিয়েছিলো,
সেটিও নিয়ে গেল সে।
বলল,যদি তারা যুদ্ধে হেরে যায়
তবে বসে বসে উচ্চ স্বরে 'লিংকিন পার্ক' গান শুনবে।
যাবার সময় আরো বলে গেছে,
মা তুমি চিন্তা করো না।
দেখো,আমরা ঠিকই জিতে যাবো।
ওরা অন্যায় ভাবে আমাদের ওয়েবসাইট
হ্যাক করেছে,ক্র্যাকও করেছে।
আমরা ওদের সকল ওয়েবসাইট হ্যাক করবো।
পারলে ওদের সোস্যাল আইডি গুলোও।
সাইবার জগৎ থেকে নাম নিশানা মুছে দিবো ওদের।
বাবা ছিলো স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন।
সেটাও ওরা হ্যাক করেছে।
নানান ভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে সেটিকে।
অনেক ডাক্তারের এখন আর
সোস্যাল মিডিয়ায় যাওয়া হয় না।
কারণ ওরা হ্যাক করেছে সেগুলোও।
নানা অবৈধ কাজ করে নিচ্ছে।
ওরা জানে না,বাঙ্গালির রক্তে কত শত শত
ক্রিপ্টোলজিক্যাল জ্ঞান মিশে আছে।
ওরা জানে না,দেশের জন্য বাঙ্গালি
কতটা কঠিন হতে পারে।
বলেই মায়ের হাত জড়িয়ে ধরলো ছেলে।
মা,নিজের দিকে খেয়াল রেখো।
বাবার আর তোমার ঝগড়া আমার বড্ড খারাপ লাগে।
বাজারে টাটকা মাছ না পাওয়া গেলে
বাবা কি করবে।
যা কিনে আনে তাই রেঁধে দিও।
লামিয়ার দিকে খেয়াল রেখো।
নাদিয়া আপুর বিয়ের পর তো ও একা হয়ে গেছে।
তবে আমি থাকলে
আমি সেই শূন্যতা পূরণ করে রাখতাম।
বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে ওর।
বিয়েটা দেয়া খুব জরুরি।
ও এ ব্যাপারে বাবার সাথে আমাকে
কথা বলতে বলেছিলো।
কিন্তু সে সুযোগ তো আর হয়ে উঠল না।
যদি ভালভাবে ফিরতে পারি
তবে ফিরে এসে সব বলবো।
শুনেছি লামিয়া নাকি সৈকত নামের
একটা ছেলেকে ভালবাসে।
তাকেই বিয়ে করতে চায় ও।
ছেলেটিও রাজি।
ধানমন্ডিতে বাসা,বাবা ম্যাজিস্ট্রেট।
ভালোই হবে,কাছে হবে।
অন্তত জ্যামের জন্য সুবিধাই বলা চলে।
তোমার মনে আছে মা
একবার নিউমার্কেট থেকে ফিরতে
সাড়ে চার ঘন্টা লেগেছিলো।
মা,আমি যাবো,
আমার জন্য যে রুটি আর আলুভাজি
করতে বলেছিলাম,করেছো?
জলদি নিয়ে এসো।
সবার পিছে পড়ে যাবো যে।
মা রুটি আর আলুভাজি এনে দিলো।
সেই খাবারটুকু নিয়েই বেড়িয়ে গেলো সে।
এরপর কখন কোথায় খেয়েছে কে জানে।
মা শুনেছে,কোন এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
নাকি খাবার সরবরাহ করছে স্পন্সর হিসেবে।
কিন্তু,তাতে কি ওর চলবে।সারাজীবন মায়ের হাতের
রান্না খেয়ে যে গড়ে উঠেছে তার কি
মায়ের হাতের রান্না ছাড়া চলে।
ছোটবেলায় তো একবার ভাত খেলোই না রেগে।
ভাত আর ডাল বড় আপু রান্না করেছিলো বলে।
এখন অবশ্য বদলে গেছে।
তারপর অনেকবার খেয়েছে বড় বোনের রান্না।
ছোটবোনের রান্নাও খেয়েছি।
কিন্তু ওরা কি ভালো খাবার দিচ্ছে কিশোরকে?
দিলেও তো অল্প।
খুব হলে এক প্যাকেট।
এতদিন তাহলে কিভাবে থাকছে কিশোর?
মায়ের মন মানে না।
বুকে কাটার ঘা লাগে।
আজ সতের দিন।