মা,
মা রে,
মা,
ওরে মা,
তুই এলি না?
দেখলি না?
কি করিস?
বসে আছিস?
তোর খোকা কাঁদে।
মা,
তুই শুনলি না।
ওরা নির্দয় মা,
কী কষ্ট সে আমি জানি,
সয়ে গেছে মা।
ও মা,
একটু শোনো মা।
মা,
ওরা আমার কথা শুনলো না
মা।
ওরা আমার পিঠে মারে
শুকনো পাটের মোড়া দিয়ে,
স্বাধীনতার শিকল দিয়ে।
কি জোরেই না আছড়ে দেয়!
এখন আর কষ্ট হয় না।
সয়ে গেছে মা।
হতো।
ঠিক যখন আমার বাঁ কানে
শল্য লাঠির আঘাত করল।
আমার দিকে গুলি ছুড়েছিল।
কিছুই টের পেলাম না।
শুধু বুকে বিধে গেল।
তারপর কী হলো জানো মা?
শুনবে?
হয়তো আঁতকে উঠবে।
ভয় পাবে।
খুব করে কাঁদবে।
মুখ ভার করবে।
আমার সাথে অভিমান।
তাতে কী?
আমি সহজে দমে যাব না।
তোমার হাতের সরপিঠা
আমি খাবোই খাবো।
কিন্তু,
যে সিন্ধু পার হয়ে এসেছি
ওদের জন্য,
তা পাড়ি দিয়ে
তোমার কাছে যাব কী করে?
আমি তো যেতে চাই।
ওরা দেখো,
কেমন করে আমার উপরে
ছুড়ে দিল পেট্রলবোমা
কেমনে মোরে পোড়ায়?
অবশেষে কী করল
জানো মা?
অবশেষে আমাকে নিয়ে
ফেলে আসে এক
কচুরীপানা ঢাকা নর্দমায়।
ওদিকে মা
চোখে তন্দ্রাহীন তন্দ্রা নিয়ে
দরজায় মাথা হেলিয়ে আছে।
খোকা দেরি করছে কেন?
আমার খোকা তো খুব ভালো।
কারো গাছের আতাটা খায় না।
কোন মেয়ের ওড়নাটা ধরে না।
বিতর্ক ছাড়া তর্ক করে না।
তবে?
তবে কি খোকার কোন দূর্ঘটনা?
আর ভাবতে পারছি না।
খোকা তুই এলি?
কিন্তু খোকা তো আসে নি।
রাত গাঢ়।
আমানিশার পক্ষের চাঁদ
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আলো দিচ্ছে।
খোকা এলো না।
মায়ের আঁচল ভিজলো,
ঘরের উঠান।
মা আজ বড় একা।
সেদিনের দিন গুনছে।
হয় ওদের ফাসি,
নয় নিজের রীসি।
এলোমেলো বকে আজ।
যারে তারে খোকা ডাকে,
আবার খোকার গুমারী।
অনেকদিন পর আজ
নগর কতৃপক্ষ
নর্দমা পরিষ্কার করবে।
হয়তো লাশ নেই,
আছে হাড়।
এমন হাড় তো কতই থাকে।
আসল আর নকল।
মেডিকেলের বারান্দায়,
প্রাণিবিদ্যার ল্যাবে।
ওদের কাজ পরিষ্কার করা,
হাড় চেনা নয়।
আজ যে খোকার দেহ
জমা হলো গ্যাসপ্লান্টে।
ব্যাস!
সেদিনের মায়ের বুকের
গর্ভধরা নির্দোষ খোকা
আজ মাকে করে বোকা
জমাচ্ছে মায়ের পেটে গ্যাস।