রচনা এবং আবৃত্তিতে : মানিক পাল  


স্টেনগানের গরম নিঃশ্বাস এখনো আমার কাঁধে।  
বাহান্নর মুক্তি পাগল  বন্দি পায়রা গুলো
খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে পড়ে একাত্তরে,
খাঁচার পাক দখলদ্বারিত্বের নিষ্পেষণের তাসের দুর্গ
ভেঙ্গে দেয় ওরা তছনছ করে ।


মৃত্যু যজ্ঞের মুখোমুখি  দাঁড়িয়ে আমার বিধ্বংসী বুলেট
ঝাঁঝরা করে দেয়  উপনিবেশকারীত্বের  ইস্পাত বর্মকে;
সাদা পায়রা গুলো স্বাধীনতা ছিনিয়ে উড়ল মুক্ত আকাশে।
বিনিময়ে, এক ঝলক রক্তে  রেঙে গেল
আমার সবুজ পাসপোর্টের মালাটে।    


পাসপোর্টটির অভিভাবকত্বে আমি যেন এক মুক্ত বিহঙ্গ।
নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াই দেশ দেশান্তরে,
গবির মরু প্রান্তরে, আমাজানের গহীন অরণ্যে,
টেমস নদীর ধরে, আইফেল টাওরের চূড়াতে,
চীনের প্রাচীরে , বেবিলনের শূন্য উদ্যানে,
নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত ম্যানহাটানে,
তাজমহলের ফটো সেশানের পাটাতনে।


এ যেন এক স্বস্তি, এ যেন এক পরিতৃপ্তি,
এ যেন আমার অহংকারের প্রতীকী ,
এ যেন আমার স্বকীয়তার পরিচায়ক,
এ যেন  বিশ্ব মানচিত্রে
আমার আত্ম বিশ্বাসের এক স্থায়ী ঠিকানা।


কিন্তু আজ?
অনিদ্র যামিনীর ডাহুক ডাকা নিস্তব্ধতায়
আমি পরাজিত দখলদার প্রেতাত্মার  
বুটের আওয়াজ যেন আবার শুনতে পাই;
পাসপোর্টের মলাটের রক্ত যেন প্রাণ ফিরে পায়,
শুনতে পাই ধর্ষিতা রমণীর আত্মা চিৎকার,
ধর্ষিতের ধর্ষণ উত্তর আত্মতৃপ্তির উল্লাস ,
জীবন রক্ষার করুন আকুতি,
সাত'ই মার্চের ম্যাগনাকার্টা
"এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ..."।


আমার অগ্নিদগ্ধ বসতবাটী উত্তাপ
আমায়  ঘুমোতে দেয় না ,
স্মৃতির জিঘাংসার চেতনা
আমার চেতনা দরোজায় কড়া নাড়ে বারবার,
জাগিয়ে রাখে আমায় সারারাত।  
আমি ঘুমোতে পাচ্ছি না,
আমি ঘুমোতে পারিনা,
আমি হয়তো ঘুমোতেই পারবোনা আর।  

স্টেনগানের গরম নিঃশ্বাস এখনও আমার কাঁধে,
টকবগে বুলেটে আজও পরিতৃপ্ত উদরে নিশ্চিন্ত সে;
ইচ্ছে হয়, এখনই স্তব্ধ করে দেই  
পরাজিত প্রেতাত্মা বুটের আওয়াজকে ;
চিরতরে কালের গহ্বরে
আমি ঘুমোই নিশ্চিন্তে।