যশশূন্য, শৌর্যশূন্য ও স্বপ্নশূন্য মুসলিম জাতিকে ‘খেলাফত আলা মিনহাজুন নাবুয়াত’-এর সোনালী যুগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকে পরাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারী - একাধারে ব্যারিষ্টার, রাজনীতিক, দার্শনিক ও কবি - ডঃ মোহাম্মদ ইকবাল তার বিশ্বাসগত দায়িত্ব জেনেছিলেন। সেই প্রযত্নে নিবেদিত ছিল ইকবাল কাব্যের বিশাল ভান্ডার। তার মাঝে ‘শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’ (অভিযোগ ও অভিযোগের জওয়াব) বোদ্ধামহলে magnum opus হিসেবে বিদিত।


‘শিকওয়া’-র দ্বারা আল্লাহর প্রতি বান্দার সরাসরি অভিযোগের মতো হৃদয়গ্রাহী ঢঙে মুসলিম-মনে ঘাপটি মেরে থাকা শতাব্দিকালের ক্ষোভকে টেনে-হিঁচড়ে লোক সমুখে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তোলা হলো। আর ‘জওয়াব-ই-শিকওয়া’-য় অকাট্য দলীল ও যুক্তির আঘাতে ঐ ভিত্তিহীন অভিযোগগুলোর ব্যবচ্ছেদ করে ছাড়লেন।


প্রাজ্ঞজনদের কাছে রোগগ্রস্থ মুসলিম জাতির ডায়াগনসিস হিসেবে ‘শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’-র পাঠ আজোবধি অতীব তাৎপর্যবাহী। নান্দনিক প্রশ্নে কবিতা দু’টি বিশ্ব-সাহিত্যে অনন্য সৃষ্টির মর্যাদায় আসীন। উচ্চাঙ্গের ভাষাশৈলী ও হৃদয়গ্রাহিতার কারণে আজো পৃথিবীতে বহুল পঠিত জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থের অন্যতম হলো ‘শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’। উপমহাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মনে আল্লামা ইকবালের পংক্তিগুলো যেমন বিশেষ প্রেরণা যোগিয়েছে, তেমনি গোটা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত মানুষের কাছে তার পংক্তিগুলো আজো ভাষা-ধর্ম নির্বিশেষে সমান অর্থবহ।


মোহতারমা উম্মে কুলসুমের যাদুকরী কন্ঠে উচ্চারিত ব্যাপক তোলপাড় তোলা আরবী অনুবাদ 'হাদীস আল রুহ' ও জনপ্রিয় ফার্সি অনুবাদের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় সকল ভাষায় কবিতা দুটি অনূদিত হয়েছে যুগ-জিজ্ঞাসার কারণেই। একই কারণে বাংলা ভাষায় অতি জনপ্রিয় ও কম পরিচিত মিলিয়ে চল্লিশ-এর অধিক কবি এর স্বার্থক অনুবাদ করেছেন। সেই ধারা আজো অব্যাহত আছে। একালের চিন্তানায়কেরা কমবেশী ‘শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’ দ্বারা প্রভাবিত।