রবীন্দ্র যুগে যে কজন কবি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন
করতে সক্ষম হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮
৯৯-১৯৭৬) তাঁদের মধ্যে অন্যতম।বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম'বিদ্রোহী'কবি হিসেবে পরিচিত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর মধ্যবর্তী  সময়ে রবীন্দ্র বাংলা কাব্য যখন গৌরবোজ্জ্বল
তখন কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবে কাব্য ভূবনে প্রবেশ করেন। প্রতিভা বিকাশের প্রথম সময়ে সামাজিক,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবকা-
কাঠাম পর্যালোচনায় দেখা যায় কি অনিশ্চিত পরিবেশ আর
বিশৃ্ংখল অবস্থায় জাতীয় জীবনে শাসন যন্ত্রের
কাঠামোর মধ্যে এসেছে জীর্ণতা,প্রতিটি স্তরে নিপীড়িত
জনগনের দীর্ঘশ্বাস দেশের বাতাস বিষাক্ত করেছে;
জাতীয় জীবনে তখন ঘনানধকারের সমাবেশ।বিদ্রোহী
কবি এই অবস্থার মধ্যে একটি নতুন সুর সংযোজন
করলেন-উৎপীড়িত জনগনের প্রতি সহানুভূতির মাধ্যমে ।
অকৃত্তিম সহমর্মিতা  তাঁর কাব্যে ও অপরাপর সাহিত্য
সৃ্ষ্টিতে সুস্প্ষ্ট হয়ে উঠলো। সেই সঙ্গে কবির বলিস্ঠ
কন্ঠস্বরের নির্ভয় উচ্চারণ বক্তব্যকে করেছে ব্যতিক্রমধর্মী ও
  শক্তিশালী। বিংশ শতাব্দী সঙ্কটের কাল।
এর প্রথম পর্যায়ে ভারতবর্ষে নানা সমস্যা ও সং-
কট দেখা দিয়েছিল।এই সমস্যাগুলো সাধারণত ইউ-
রোপের দেশগুলোর দ্বারা প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত।ঊনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে ইংল্যান্ডের
শিল্প বিপ্লব ভারতবর্ষে এসে পৌছায়।দু'দুটি বিশ্বযু-
দ্ধের ফলে মানব মনে ধ্বংস,হত্যা প্রভৃ্তি-বিভীশিকা
বিশ্ব জুড়ে চলছিল।ভারত বরষে ১৯০৫ সালে বংগ-
ভংগ আন্দোলন,১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম
অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন জারী প্রভৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক
বিষয়ের জয়োগান করেছেন,বিদ্রোহী কবি সাধারণ
মানুষের মুক্তি কামনা করেছেন তাঁর কাব্যে।কাজী নজ
রুলের কাব্যে বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী তাই বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।
নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা' প্রথম
প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে। কবি এই কাব্যে বিদ্রোহী
   রুপ ধারণ করে আবির্ভূত হন বাংলা সাহিত্য গগনে
নজরুল ইসলাম উপলব্ধি করেছিলেন 'মানুষের চেয়ে
বড়কিছু নাই-নহে কিছু মহিয়ান'।অন্যায় অত্যাচারের
বিরুদ্ধে তিঁনি বলিষ্ঠভাবে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেন।
কবি হৃদয়ের বহ্নি জ্বালাই তাঁর প্রথম অনুভূতি।তার
গভীরতম চেতনায় ক্ষোভ,বঞ্চিতের প্রতি নিবীড় সহ
নুভূতি বজ্রাগ্নির মত অসহনীয় উত্তাপে ফুটে উঠেছিল।
অগ্নিবীণা'র বিদ্রোহী কবিতায় তাই তিনি ঘোষণা করে
ছেন-
            'বল বীর-
       বল উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারি,নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির
        বল বীর
  বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্য গ্রহ-তারা ছাড়ি,
ভ্যূলোক-দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া '।
   কবি পরাধীনতাকে কখন মেনে নিতে পারেননি।
সুন্দর সমাজ,সুন্দর পৃ্থিবীর স্বপ্ন তাঁর চোখে ধরা
পড়েছিল,তাঁর লেখনীতে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাধনা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কাব্যকে অবলম্বন করেছেন
সংগ্রামের মাধ্যম হিসেবে।তাঁর সংগ্রামী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে এই 'বিদ্রোহী' কবিতাটিতে। নজরুল
ধুমকেতুর মত কাব্যেও প্রকাশ করেছেন।আমরা  তাঁর 'ধুমকেতু'কবিতাটিতে লক্ষ্য করি,ভারতবর্যে
রাজনৈতিক অস্থিরতার এক বিশেষ মুহুর্তে কবি এই
কবিতাটি রচনা করেন।