সুপ্রিয় পাঠক, আবারও এসেছি আলোচনার কথা নিয়ে।
পরাবাস্তবতা শোভন চিৎপ্রবাহী গদ্য রচনার চেষ্টায় বাংলা সাহিত্যে ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়(১৯০৮-৭৪)
এর 'অন্তশীলা' 'আবর্ত' 'মোহনা' এবং বুদ্ধদেব বসুর
(১৮৯৯-১৯৫৪)'তিথিডোর' স্মরণীয়। কবিতায় জীবনা
নন্দ দাশ(১৮৯৯-১৯৫৪),বিষ্ণুদে, অমীয় চক্রবরতী-
এঁর রচনায় পরাবাস্তবতার দেখা মেলে।বাংলা সাহিত্যে
জীবনানন্দ দাশের ভুমিকা অশেষ।বাংলা কাব্যাঙ্গনে এক
নতুন ধারা নিয়ে তাঁর আবির্ভাব।তাঁর এই নতুন ধারা
হলো পরাবাস্তবতা।জীবনানন্দ দাশের কবিতাই প্রথম
প্রথম পরাবাস্তবতার সুস্পষট। তাঁর'শ্রেষ্ঠ কবিতর(১৯
৫৪)সুয়রিয়ালিস্ট শব্দটি প্রয়োগ করেছিলেন।জীবনানন্দ
দাশের'বনলতা সেন'কাব্যগ্রন্থেই বাংলা সাহিত্যে প্রথম
কয়েকটি বিশুদ্ধ পরাবাস্তব কবিতার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়
।'হাওয়ার রাত'কবিতায় হৃদয়ে যে এ পৃথিবী ছেড়ে উড়ে যায়, বুনোহাঁস কবিতায় 'বুনোহাঁসেরা'পৃথিবীর সমাপ্তীর পরে হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতরে উড়ন্ত;'নগ্ন নির্জন হাত',কবিতায় ইতিহাসের বরনাঢ্য
তার ভিতরে একটি জাগ্রত হাত;'হরিণেরা'কবিতায়
প্রথম পঙক্তিতেই স্বপ্নের ইশারা প্রভৃতি পরাবাস্তবতা
র স্পষ্ট। জীবনানন্দ দাশের পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ 'মহা-
পৃথিবীতেও পরাবাস্তবতার নিদর্শন পাওয়া যায়ঃ-
   এই খানে মৃণালিনী ঘোষালের শব
          ভাসিতেছে চিরদিন
    নিল লাল রুপালির নীরব।
'স্বপ্ন' কবিতায় শেষ স্তবকে যখন পৃথিবীর কিছুই
থাকেনা তখন সেই মুখ আর আমি বর সেই স্বপ্নের ভিতরে স্পষ্টতই সুয়রিয়ালিস্ট জগত নির্মাণ করে।
সাতটি তারার তিমির' গ্রন্থের 'ঘোড়া','গোধূলিসন্ধির
ন্রিত্য, সেই সব শেয়ালেরা ,সপ্তক, একটি কবিতা,
প্রভৃতি কবিতায় পরাবাস্তবতার ব্যাপক পরিস্ফুটন
ঘটেছে। পরবর্তী কালে সৈয়দ আলী আহসান(১৯২২)
এবং আব্দুল মান্নান সৈয়দ(১৯৪৩)এর কবিতায় পরা
বাস্তবতায় ব্যপক ব্যবহার লক্ষণীয়। 'জীবনানন্দ' নামক কবিতায় আব্দুল মান্নান সৈয়দ জীবনানন্দকে
বিভিন্ন পেক্ষণ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। এ দেখার
ভঙ্গি আর বর্ণনার ভঙ্গি পরাবাস্তব চেতনায় আক্রান্ত।
'দেখি তার চুলে রাত্রি থেমে আছে
চোখের সবুজ প্রিজমের ভিতর থকে লাফিয়ে পড়েছে ফড়িং
হেমন্তের শিশিরের সুঁই ঘিরে ধরেছে তার পদ্মযুগল
  কোন আদিম দেবতার কাছে নতজানু
     ধুসর মানুষের মতো
দেখি তার ভিড় ভিড় স্বগত উচ্চারণ থেকে
বেরিয়ে আসছে সন্ধ্যাবেলার সব গুলো তারা
দেবী তার পাঞ্জাবীর ঢোলা পকেটে উঁকি দিচ্ছে চাঁদ।'
অতি আধুনিক কালেও অনেক কবির কবিতায় পরা-
বাস্তবতার লক্ষন সুস্পষ্ট।