মেঘলা মেয়ে,
কুয়াশায় মোড়ানো খামে, ভোরের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম।
শত অভিযোগের কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছ তুমি আমায়,
একবারও জানতে চাও নি কেমন আছি!
তুমি লিখেছ, এক ঘিয়েমি কষ্টের কথা লিখতে
তোমার অভ্যেস হয়ে গেছে।
হয়তো আমি তোমার স্মৃতির বিস্তৃত একটি অংশ হয়ে গেছি,
তাই এই একঘিয়েমি কষ্ট তোমার!


আমার এখনো মনে আছে,
তোমাকে একটা প্রজাপতি দিন দেব বলে কথা দিয়েছিলাম।
জানো, জীবনের সমস্ত সঞ্চিত ভালোবাসার দামে
একটা প্রজাপতি দিনও কিনেছিলাম।
বুক পকেটের ভাঁজে রেখে তোমা অবধি পৌছাতেই দেখি,
তোমার সমস্ত শহর প্রজাপতিতে ছেয়ে গেছে।
তখন তোমার প্রতিদিনের প্রত্যেকটা মূহুর্তই প্রজাপতিময়।


মেঘলা মেয়ে, তুমি হয়তো জানো না
তোমার খোঁপায় বেলী ফুল জড়াতে নিজ হাতে মালা গেঁথেছি।
প্রতিবারই যখন কাছে গিয়ে হাত রাখতে চেয়েছি তোমার চুলে,
ঠিক তখনই তোমার এলোমেলো চুল ছুঁয়ে গেছে আমায়।
ভুলে গিয়েছি নিমিষেই সব,
এমনি করেই মালাগুলো শুখিয়ে গেছে।
শুখিয়ে যাওয়া মালা আজো ভীষন যন্ত্রনা দেয় আমায়;
এরাও আমার মতো নিজের ভেতর প্রাণ ফিরে চায়।
পারবে একটু হলেও প্রাণ ফেরাতে?


কথা ছিল,
সমস্ত জোৎস্না রাত আমরা চষে বেড়াবো,
পাখিদের ঘুম ভাঙ্গাবো,
রাতের আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘেদের
পথ ভুলিয়ে ফেরাবো আমাদের পথে।
সংসদ ভবন, নীলক্ষেত, পলাশী, শাহবাগ, টিএসসি
মুখরিত হবে তোমার কবিতায়;
নিয়ন আলোয় একমাত্র আমিই হবো তোমার মুগ্ধ শ্রোতা।
কথা ছিল,
অন্ধকারে তোমাকে দেখবো জোনাকির মৃদু আলোয়।
কথা ছিল! তবে এসব এখন শুধুই কথার কথা!


মনে আছে, তোমাকে নিয়ে কিছু কবিতা লিখেছিলাম?
তুমি তাতে চোখও বুলাওনি!
তুমি তখন ব্যাস্ত ছিলে জীবন, রুদ্র, রবী, সুনিল নিয়ে,
তাইতো ভীষন হিংসে হতো ওদের।
ইচ্ছে হতো চিৎকার করে বলতে,
আমিই তোমার একমাত্র কবি।


মেঘ মেয়ে, আমার প্রজাপতি দিন ফুরিয়ে গেছে।
ভোরের শিশিরও এখন আর ছুঁয়ে যায়না আমায়,
হয়তো তোমায় তেমন  কিছুই দেবার নেই এখন আর।
আমি তোমাকে বড়জোর একটি বিকালের
কিছু মুহুর্ত দিতে পারি,
যেখানে তুমি থাকলেও জাফরান রাঙা শাড়ির গন্ধ
আর আমাকে ছুঁয়ে যাবে না।
আমি তোমাকে দিতে পারি ধুলোমাখা দুপুরে
ষ্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের হুইসেল,
যা অস্পষ্ট হতে হতে হারিয়ে যাবে চিরতরে।


আজ ফিকে হওয়া স্বপ্নগুলোই
আমার দহন কালের নিবিড় বন্ধু,
যাপিত দুঃস্বপ্নের সারথি।


তোমার লাল নীল সংসারের গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে।
জানতে ইচ্ছে করছে,
তোমার অগোছালো তুমি কতটা গুছিয়েছে!
পাখির মতো কি এখনো উড়ে বেড়াও?
আর তোমার ওই  খরগোস ছানাটির কি খবর?
কি নাম যেন ওর?
বেড়ালের বাচ্চাটা এখন নিশ্চয়ই মা বিড়াল হয়েছে?
দেখ, আবার ভুল করে ফেললাম!
ওকে বিড়ালের বাচ্চা বললে কি রাগটাই না করতে!
রাগে গাল ফুলিয়ে বলতে,
'এই যে মিস্টার শোনেন ওর একটা নাম আছে'
আর তখনই আমি তোমার নরম গাল ছুঁয়ে দিতাম।


তোমার চিঠিটা বড্ড এলোমেলো করে গেলো আমায়।
তুমিও নিশ্চয়ই নিজেকে সামলে রাখতে চেষ্টা করছো!
নিজেকে সামলে রেখো।


অন্ধকারে ডুবে যাওয়া তোমার অতীতের
"রোদ্দুর"


পুনশ্চ:
তোমার দেওয়া কবিতার বইগুলো
প্রতি রাতেই আমাকে কিছু কবিতা শোনায় তোমার মতো করে।