মা

তবু আমি আজও পাই
স্বপ্নের ভ্রান্ত দুপুরে
কাঠফাটা রৌদ্রের তৃষিত হৃদয়
হিজলের ছায়ার মতো
তোমার ঐ আঁচলের শ্যামল শীতল।
রবীন্দ্রনাথের গানের মতো ছুটে আসি
তোমার মায়ায়।
তুমি নেই,
সে কথা বলেনি সে রোদ,
বলেনি নদীর তীর
বটঝুরি, সন্ধ্যার দীপ।
তুমি নেই, এই দুঃসহ স্বাভাবিক বোধ
বিষন্নতার দাবদাহে
অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে কখনো কখনো।
ঠিক চারটায় স্কুল থেকে ফিরে
বই, খাতা, স্লেট
এক ঝটকায় ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে মা!
তারপর তীর্যক রোদে পোড়া
কপালের উপর হাত বুলাতেই
কী রকম লাজনম্র অবুঝ হয়ে যাই আমি।
সেই যে স্কুল পালিয়ে তোজম্বর চাচার
পেয়ারা গাছের মগডাল ভেঙে
ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে বেঁচেছি।
"কুলের কাঁটার আঘাত সহিয়া
কাঁচাপাকা কুল খেয়ে"
তাজেম স্যারের বেত্রাঘাত আর
মন্টু স্যারের কান ধরে ওঠবস করবার কথা
তোমাকে তো কখনো বলিনি।
তুমি বলতে, মুখটা কি শুকিয়ে গিয়েছে দেখো!
লেইজারে খাসনি বুঝি কিছু?
তোমার আঁচলে গোঁজানো মাথাকে
না সূচক নাড়িয়ে
অপরিচ্ছন্ন শুয়ে পড়েছি সটান।
তোমার প্রতিটি লোকমা ভাতের কথা মনে হলে
আমি আজও সেই সেদিনের শিশু বনে যাই মা।
আমার ক্লান্ত চোখের দেশে জমা হয়
মৃত এক ঝর্ণার সবশেষ শুকনো প্রপাত।
তুমি নেই কেনো?
এই অবুঝ প্রশ্নের কাছে আর কতো
নতজানু হবো মা?
তোমার আঁচল ধরে কেনো আজও খেলা করে
সে আমার দুরন্ত শৈশব?

-মাসুদ আলম বাবুল
৩০.৪.২২ বেতাগী, বরগুনা।