মনে পড়ে যায় সেই শৈশববেলা
স্নিগ্ধ জীবন পড়েনি তখনো ঘাটে বাঁধা।      
ব্যস্ততার আড়ালে যখন সময় হয়নি হরা।  
হৃদয় মাঝে রুক্ষতা দেয়নি ততদিনে ধরা।
  
চিন্তার মাঝে ঠাসাঠাসি আলোকিত ছিল চেতনা।  
স্বার্থপরতার কালিমায় লেপেনি তব বিবেচনা।  
ভালবাসার শক্তিতে সেই দস্যি বয়স ঠেলেছে সকল বঞ্চনা    
ক্লেধহীন মনজগত ছিল বিভোর; নিয়ে রঙিন কল্পনা।          


এক্ষণে, স্মৃতিরা সব পাখনা মেলে,  
মন-মন্দিরে করে আঁকিবুঁকি খেলা।
উড়ে চলে অতীত চারনে,      
স্মৃতিকাব্যে; রোমন্থনে নিয়ে রঙের ঢেলা।      


বাড়ির পেছনে ভরা বর্ষণে
ভরে যায় সব নালা-জলা।
ভরা বিলে কানাকানি জলে
চলে দল বেঁধে নাওয়া।
কেহ লাফায় পাড়ের কিনার বেয়ে
ডিগবাজীতে প্রতিযোগিতার ছলে।
ন্যূজপিঠ গাছ অনেক আগেই ছুয়েছে বুক; জলে  
মাথা খানি উচ্চে আকাশের কোলে ।
কেহ চড়ে বসে সেই তাল গাছে  
তা হতে অভিলাষে লম্ফে শীতল জলে।    


শাপলা-শালুক ফোটে দলা করে
হেথায় হোথায় আপন আশে।
দুষ্টু ছেলের দল মাতে তারি মাঝে
চালায় সারিসারি কলার ভেলা।
ছোটে সবাই তারি পানে চেয়ে
কে কত তুলিতে পারে সবার আগে
এই তাদের দুরন্ত খেলা।
লাইল দিয়ে কেহ বানায় হাতের-গলার মালা    
এ যেন প্রকৃতির দানে তৈয়ারি অমূল্য গহনা।
আহার ভুলে তব উম্নাদনে খেলা শেষে
চলে ভেট খাবার পালা।  


মাঝি মাল্লারা ছুটে চলে দুরপানে
যাত্রী ভরা নৌকা নিয়ে  
এ পাড় হতে ও পাড়ে
জলের বুকে ঢেউয়ের দোলা লাগিয়ে।
মুখে হাঁসি হ্রদয়ের প্রশান্তি  
ঝরে পড়ে গান হয়ে
এ কূল হতে ও কূল তরে।


জেলেরা সব মাছ ধরে
নিয়ে ডিঙি, কারেন্ট জালে।
খেয়া জাল নিয়ে কেউবা ছাকে
ছোট বড় মাছ ওঠে ঝাঁকে-ঝাঁকে।
তারি মাঝে সদ্য তোলা পুঁটি, দারকিনে  
রাস্তার ধারে জটলায় তা বিকিকিনে।    

সাঁঝ বেলায় ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ব্যাঙের ঢোলে
ঝিঁঝিঁদের বাঁশরিয়া বাঁজে, তব আবহ সঙ্গীত তালে      
তারি সাথে জোনাক পোকার মিটিমিটি আলো বর্ষনে  
প্রস্তুত হয় মঞ্চ সুসম গ্রামীণ জীবনের।  
ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া বাউলের গানে।  

---------------------------------
জিগাতলা, ৩৩/এ, মনেশ্বর রোড, ঢাকা। রাত্রি ১০ টা । ৩০/১১/২০১৭


বিঃ দ্র : কবিতাটি  নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা (প্রথম আলো) ও নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ক্লাব এর স্বাধীনতা সংখ্যা ২০১৮  "ঊর্ণিষা" সাময়িকীতে প্রকাশিত।