ফুড়ুৎ করে ফেরারী হয়েছে কৈশোর সেই কবে
পাটসোলায় সজনের আঠা লাগিয়ে ফড়িঙের পিছে দৌড়ানোর
হাফ-প্যান্ট পরা কৈশোর ফেরেনি আর
স্মৃতি হাতড়ালে কৈশোর বুকের মধ্যে সুতো কেটে উড়ে যাওয়া ঘুড়ির
সাতরঙা লেজের মতোই ফড়ফড় করে ওড়ে


কৈশোর আহা কৈশোর! তুমি ছিলে শীতের সকালে নাড়ার আগুনে ওম
খেজুরের রসে গেলাসে গেলাসে সুখ ছিলে তুমি
স্কুলের টিফিনে তুমি ছিলে দাদীর ডাল মাখা ভাতে অপেক্ষার দুপুর!
বোতল-ব্রাশ আজ যতোনা টানে তারও বেশী টেনেছিলো কৈশোরের হিজলের ফুল
মুখ না ধোয়া ভোরে কলা গাছের ছালকে সুতো আর ঝাঁটার কাঠিকে সুঁই বানিয়ে
কৈশোরের ফুলপরী আমরা হিজলবনে গেঁথেছিলাম কতো কতো মালা
স্কুল ফাঁকি দিয়ে বিলে জালি ঠেলে চিংড়ি মারার কৈশোর আর ফিরবেনা জানি
রবি-শষ্যের মৌসুমে খোলা মাঠে আগুনে পোড়ানো বুট আর মসূর কিংবা-
খেঁসারির ফল সিদ্ধ করে খাওয়ার যে সুখ তুমি দিয়েছিলে, কৈশোর!
কিংবা বিকালে বটতলার হাটে পথ হারিয়ে রাত করে বাড়ি ফেরা
ফেরার পথে মুঠো মুঠো জোনাকী ধরে এনে লেপের তলে রত্ন গোণার সুখ
–এসবই তো দিয়েছিলে তুমি, হে কৈশোর!
ফুটবল হা-ডু-ডু আর জলের অবাধ ডুব সাঁতার তুমিই শিখিয়েছিলে
তুমিই রাতে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে সাত সমুদ্র – তেরো নদী সাঁতরে
ডালিম কুমার সেজে কঙ্কাবতীকে উদ্ধারে যেতে হয়
তারপর এক নিঃশ্বাসের ডুবে রাক্ষসের প্রাণধারী ভ্রমরটাকে
কিভাবে বধ করতে হয় জলের তলে সেটাও তুমিই শিখিয়েছিলে


নিয়ম-নীতির লাগাম তুমিই প্রথম টেনে ধরেছিলে, হে কৈশোর
শৈশবের ল্যাংটো সখীকে তুমিই করেছিলে লাজবতী কিশোরী
কেমন একটা দুরত্ববোধ শিখিয়েছিলে তুমি আমাদের;
আর তোমাকে হারালাম যেই –
যেদিন থেকে যৌবনে দিয়েছি আমি পা
সেই সখীটাও হয়ে গেলো সোমত্ত নদী;
তার যোগ্য নাবিক আমি আর কোনোদিনই হতে পারলাম না...