আমাদের গ্রাম
জয়শ্রী কর


আমাদের গ্রামজুড়ে সবুজের মেলা
শালিক চড়াই কাক খেলে সারাবেলা।
আঁকাবাঁকা মেঠো পথে চলে নাকো গাড়ি
পায়ে হেঁটে যাতায়াত বেশি কাঁচা বাড়ি।


পথপাশে বাঁশঝাড় হেলে আছে শাখা
দুই ধারে উঁচু গাছ পথ ছায়া ঢাকা।
ঘড়া কাঁখে গৃহবধূ জল নিতে আসে
মাথায় ঘোমটা টানা মুখে হাসি ভাসে।


পুবদিকে খোলা মাঠ চাষি করে চাষ
মাঠে চরে গরু ভেড়া খায় কচি ঘাস।
বধূরা বাসন মাজে ছাই দিয়ে ঘাটে
রাঁধে-বাড়ে মাঠে যায় সারাদিন খাটে।


শিশুরা সাঁতার কাটে পুকুরের জলে
দলবেঁধে খেলা করে বুড়ো বটতলে।
রাশি রাশি পাকা ধান উঠবে এবার
ঘরে ঘরে গাই গরু রয়েছে সবার।


গোয়ালারা দুধ নিতে যায় ঘরে ঘরে
মা-ঠাকুমা ঘোল মুয়ে ঘি-মাখন করে।
পাশ দিয়ে রেলপথ ছোটে কত গাড়ি
লোকজন তাতে চড়ে দেয় দূরে পাড়ি।


আমাদের গায়ে আছে ফুটবল মাঠ
প্রতি শনিবার বসে একপাশে হাট।
ঠাকুরদালান সাজে পুজো অবকাশে
গাঁয়ের বধূরা সব পুজো দিতে আসে।


সুখদুঃখ অনটন সদা সহচর
বারোমাস উৎসবে তবুও মুখর।
পথপাশে পাঠশালা সামনেই মাঠ
ছেলেমেয়ে একসাথে করে সেথা পাঠ।


রোজ যায় পাঠশালে ব্যাগ নিয়ে কাঁধে
দুপুরে খাবার পায় ইরামাসি রাঁধে।
ছুটি হলে খেলাধুলা মাঠে ছোটাছুটি
ধুলোবালি মেখে ওরা করে লুটোপুটি।


ঘরে ঘরে নানা পূজা হয় বারোমাস
ষোড়শোপচারে হয় প্রতি বার রাস।
রথের রশিতে টান, ঝুলনের দোলা
মনসার পূজাপাঠ চড়কের ঝোলা।


আম-কাঁঠালের সারি নারিকেল গাছ
পুকুরের ভরা জলে খেলা করে মাছ।
সাঁঝের প্রদীপ জ্বেলে আঁচল গলায়
প্রণাম জানায় মাকে তুলসীতলায়।


টিমটিম জ্বলে বাতি কেরোসিন কুপি
মা'র কাছে গান শোনে শুয়ে চুপিচুপি।
পাখির কূজন চলে খেলে আলোছায়া
মিলেমিশে একাকার কত স্নেহ মায়া।