*                  স্মৃতিকথা
                   জয়শ্রী কর


গাঁয়ে আমার শ্বশুরবাড়ি কাঁসাই নদীর বাঁকে
শাশুড়িমা উঠত জেগে কোঁকর কোঁকর ডাকে।
          খড়ে ছাওয়া মাটির বাড়ি
          মাটির তৈরি ভাতের হাঁড়ি
ঘরে ঘরে ভাঙতো কড়াই হাত ঘুরিয়ে চাকে
যেতাম আমি পুকুরঘাটে কলশি নিয়ে কাঁখে।


উঠোন জুড়ে দিতে হতো গোবরজলের ন্যাতা
মায়ের ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে তৈরি হতো কাঁথা।
           বসার জন্য পাতার চাটা
          ধান-ঝাড়ার বাঁশের পাটা
সেদিনের সে স্মৃতি আছে মণিকোঠায় গাঁথা
বারান্দাতে বেড়া ছিল ভালকি বাঁশের বাতা।


মাথায় ঘোমটা দিতে হতো শ্বশুরবাড়ির দেশে
আপন করে নিতে হতো সবায় ভালোবেসে।
           এখন সেসব গেছি ভুলে
          মাথার কাপড় গেছে খুলে
তাল মিলিয়ে কাটছে জীবন কান্না-হাসি হেসে
দু'এক কথা লিখছি খাতায় এখন কবির বেশে।


ঘরের কাজে হাত লাগাতাম রোজই মায়ের সাথে
   খেতে বসে মায়ের স্নেহ গন্ধ পেতাম ভাতে।
             কত গল্প কাজের ফাঁকে
           দুলতো নোলক বধূর নাকে
  গোবর-লেদি দিতাম রোদে পাকা ঘরের ছাতে
  তুলসিতলায় যেতাম আমি প্রদীপ নিয়ে হাতে।


   মা কাকিমা কুচি নেড়ে ভাজত খোলায় মুড়ি
  খাবার শেষে ভেঙে দিতে চুন দিয়ে পান খুড়ি।
             উনুন জ্বলত বাঁশপাতাতে
             ঢেঁকি সচল ধান ভানাতে
দিনে দিনে হারিয়ে গেছে নেই কোনো তার জুড়ি
    মা-জেঠিমা সবাই এখন প্রবীণা থুতথুড়ি।


     গোয়ালভরা গোরু ছিল, দুধে প্রচুর মাখন
  শিকায় তোলা ঘিয়ের হাঁড়ি থাকত ভরা তখন।
           হ্যারিকেন আর লম্ফ সাজা
            পুকুর-ঘাটে বাসন মাজা
   সারাটা রাত জ্বলত কুপি সরল জীবনযাপন
মায়ের সাথে দেখতে যেতাম চড়কমেলা, গাজন।


   ডাকে না আর হুক্কাহুয়া শিয়াল সন্ধ্যাবেলা
     ভুলে গেছে কানামাছি বউ বসন্ত খেলা।
            আমের কুশি তেঁতুল মাখা
             লবণ দিয়ে রৌদ্রে রাখা
চেটেপুটে খেতাম ছাতে করতো না কেউ হেলা
ঠামির সাথে যেতাম আমরা কাছেপিঠের মেলা।