তিথির জীবনে এসেছিল প্রেম
কুড়ি বছরের প্রারম্ভিককালে,
অন্যদের মতো তিথিও তখন
প্রেম করেছিল নীরবের সাথে।
দেখেছিল স্বপ্ন, পুষেছিল আশা,
জগতের সব রীতিনীতি ভুলে।
সারাদিনব্যাপী সারারাতব্যাপী
স্বপ্নের নকশা এঁকে এঁকে,
সাজিয়েছে তারা অজানা সংসার
এক আকাশের তলে বেঁচে থেকে।
ভালোবাসা যেন এনে দিল
দুই মুখে বিশ্বজয়সম হাসি।
কল্পনার সোনালি পাখায় ভর করে
রবি শুয়ে গেছে অস্তপারে
রাত এসেছিল নিশানাথ নিয়ে
কোলাকুলি করতে গভীরে।
দেখতে দেখতে কেমন করেই
তিথিদের ছয়টি বছর চলে গেলো
প্রেমের দেশেতে বসবাস করে।
ছিল নানান রঙের সুখ,ছিল নানান রঙের দুখ;
ছিল সংশয়ভরা জীবন
তাদের চলার পদে পদে।
আর মাত্র কিছুদিন বাকি,
বিয়ের পিড়িতে তিথিকে বসতে হবে।
ওইদিকে নীরব ছুটছে চাকরির খোঁজে,
সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করে,
বিয়ে যদি করতেই হয় তিথিকে করবে।
ভালো একটা চাকরি হলে
মেনে নিবে পরিবার অনায়াসে।
একটা বছর সময় পেলেই
ভালো একটা চাকরি হয়ে যাবে--
এ বিশ্বাস তারা সদা বেঁধে রাখে বুকে।
তিথির কথায় আসা যাক-------
বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল বছর দুয়েক আগে,
সেইবার অনেক বুঝিয়ে বলেছিল মা-বাবাকে---
"পড়াশোনা শেষ হোক আগে,
তারপর বসবো বিয়ের ঘাটে।"
পাড়া-প্রতিবেশী বলাবলি করে
মা-বাবার দিকে মিষ্টি মুখে বিষাক্ত অধরে---
"মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে ঢের,
সময় থাকতে সুপাত্রে করুন কন্যা দান।"
কুটুম্বরা নিয়ে আসে কত বিয়ের প্রস্তাব,
তিথির মা-বাবা তাই বসে বসে শুধু ভাবে,
রাতে ফিসফিস করে জনক-জননী বলে
বিয়েটা দিলেই তবে মুক্তি পাবো
মোরা সকল যন্ত্রণা থেকে।
বাবা বলে --- "তিথি মা রে, আমার দায়িত্ব
ভালো গৃহস্তের ঘরে বিয়ে দিব তোরে
যেন সুখে ও শান্তিতে সংসার-জীবন চলে,
তোর সুখই তো আমাদের সুখ।"
তিথি চুপ করে বসে আছে বাবার সামনে,
দুঃশ্চিন্তার রেখা দেখে মা-বাবার মুখে,
তিথির অন্তরে চলে দোটানা অবস্থা।
সমাজের কাছে, আত্মীয়ের কাছে
তিথিদের স্বাধীনতা সর্বক্ষণ বন্ধী;
তিথিরা নিজের পছন্দ পাত্রের সাথে
বসতে পারে নি বিবাহের রূপে।
"এবার একটা ভালো প্রস্তাব এসেছে,তিথি,"
হেসে হেসে বাবা বলে;
"ছেলের বাবার মস্ত কারবার,
ছেলে তো সোনার খনি,
জানিস মা, বিরাট চাকরি করে
বড় এক কোম্পানিতে !"
অন্যদিকে মুখ ফুটে মেয়ে বলতে পারে না
ভালোবাসি একজন মানুষকে,
তারেই তো চাই বাকিটা জীবনজুড়ে।
কিন্ত কে বুঝবে এই ভালোবাসা?
অদ্ভুত ধরণী প্রাচীরের ন্যায়
থির দাঁড়িয়ে রয়েছে দুজনার মাঝে।
এই নিষিন্ধা ধরণীর সাথে
প্রেমযুগলের কত যুদ্ধ হয়েছিল যুগে যুগে,
যুদ্ধ হয় যুদ্ধ হবে ভবিষ্যতে।
দুজন মানুষ দুজনকে ভালোবেসে
যদি সুখী হয়,ক্ষতির তো কিছুই দেখি না।
ভালোবাসা এভাবে করেই
লাঞ্চিত হয়েছে বহুবার সামাজিক জীবের
মঞ্চে।
জগতের রীতি, জগতের ভীতি,
স্তব্ধ করেছে প্রেমের গতি
যুগযুগান্তর শতাব্দী অবধি।